অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

আমাদের দৈনন্দিন খাবারে অতি ব্যবহৃত একটি উপাদান হলো চিনি। চা, কোল্ডড্রিংস, সরবত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুস্বাদু রান্নায় কৃত্রিমভাবে তৈরি চিনির ব্যবহার হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিকভাবে ফলমূল, শাকসবজি, শস্য ও দুগ্ধ জাতীয় শর্করাযুক্ত সব খাবারে চিনি থাকে। প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণের তেমন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। কারণ, এসব উদ্ভিদ জাত খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রয়োজনীয় খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবারে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে।

আমাদের দেহ এসব প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত খাবারকে ধীরে ধীরে হজম করে এবং সেগুলিতে থাকা চিনি দেহের কোষগুলিকে অবিচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহের কাজ করে। খাবার হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি ও গোটা শস্য গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস হয়।

তবে, আপনি যখন অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি গ্রহণ করেন তখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। অর্থাৎ, খাবার প্রস্তুতকারীরা স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য খাবারে যে কৃত্রিম চিনি যুক্ত করে, তা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।

সংযুক্ত চিনির শীর্ষস্থানীয় উৎস হচ্ছে- কোমল পানীয়, ফলের জুস, মিষ্টি দই, কুকিজ, কেক, ক্যান্ডি এবং বেশিরভাগ প্রক্রিয়াজাত খাবার। এছাড়াও স্যুপ, রুটি, মাংস এবং কেচাপের মতো এমন সব খাবারে চিনি ব্যবহার করা হয়, যা আমরা মিষ্টি হিসাবে ভাবি না।

এর ফলে প্রতিদিন আমরা নিজের অজান্তে খুব বেশি পরিমাণে চিনিযুক্ত গ্রহণ করি। আমেরিকান ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুসারে- ইউএসএতে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা প্রতিদিন গড়ে ২৪ চা চামচ কৃত্রিম চিনি গ্রহণ করেন। এটি ৩৮৪ ক্যালোরির সমান।

হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফ্র্যাঙ্ক হু বলেন, "স্থূলত্ব ও ডায়াবেটিসে অতিরিক্ত চিনির প্রভাব প্রমাণিত, তবে একটি বিষয় বহু লোককে অবাক করে দিতে পারে, তা হলো চিনি কীভাবে তাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।"

জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিনে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ডঃ হু এবং তার সহকর্মীরা ‘উচ্চ-চিনিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস এবং হৃদরোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।

১৫ বছরের গবেষণয় দেখা গেছে, যারা দৈনিক গৃহীত মোট ক্যালরির ১৭% থেকে ২১% চিনি থেকে গ্রহণ করে থাকেন, তাদের হৃদরোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি যারা মাত্র ৮% ক্যালোরি চিনি থেকে গ্রহণ করেছেন, তাদের তুলনায় ৩৮% বেশি ছিল।

অর্থাৎ চিনি বেশি খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুঁকি ভয়ানক ভাবে বৃদ্ধি পায়। ড. হু এ বিষয়ে বলেন, “খাবারে কৃত্রিম চিনির পরিমাণ বেশি মানে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি।”

চিনি কীভাবে হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তা পুরোপুরি এখনও নির্দিষ্ট করে উদঘাটিত হয়নি, তবে এর বেশ কয়েকটি পরোক্ষ সংযোগ রয়েছে বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ পরিমাণে চিনি লিভারকে ওভারলোডেড করে।

ডাঃ হু আরও বলেন “আপনার লিভার অ্যালকোহলের মতোই চিনিকে বিপাক করে এবং খাবারগুলিকে চর্বিতে রূপান্তরিত করে”। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লিভারে বেশি পরিমাণে চর্বি জমে উঠার সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা ফ্যাটি লিভার ডিজিজে পরিণত হতে পারে, যা ডায়াবেটিসের সহায়ক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত পরিমাণে কৃত্রিম চিনি গ্রহণ রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে, এত করে হৃদরোগের সূচনা ঘটে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ, বিশেষত চিনিযুক্ত পানীয়গুলি, আপনার শরীরের ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা হ্রাস করে দেয়ার জন্য এবং ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। কারণ তরল পানীয় থেকে ক্যালোরি গ্রহণ করলে আমাদের খাবার বাসনা তৃপ্ত হয় না। এই কারণেই প্রতিদিনের খাবারে আরও বেশি ক্যালরি যোগ করতে চাই চিনিযুক্ত পানীয় খুব কার্যকর।

ডাঃ হু বলেন, “অতিরিক্ত কৃত্রিম চিনির প্রভাবে- উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ, ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস এবং চর্বিযুক্ত লিভারের রোগ সৃষ্টি করে। যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পৃক্ত।”

প্রতিদিন কতটুকু চিনি খাওয়া যেতে পারে?
যদি প্রতিদিন ২৪ চামচ কৃত্রিম চিনি গ্রহণ করা হয়, তবে তাকে অতিরিক্ত মনে করা হয়, তবে সঠিক পরিমাণটি কত? এটি বলা কঠিন, যেহেতু চিনি আপনার খাদ্য তালিকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি নয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫০ ক্যালরির (প্রায় ৯ চা চামচ বা ৩৬ গ্রাম) পরিমাণে কৃত্রিম চিনি সেবন করলে সেটাকে অতিরিক্ত বলা যাবে না। যা সোডা ১২ আউন্স ক্যান পরিমাণে কাছাকাছি। তথ্যসূত্র: হেলথ.হার্ভাড.এডু

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: