বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীদের জন্য যতগুলো আইন বদলাতে হবে, পরিবেশ বদলাতে, বিনিয়োগ করতে—সব কিছু করতে বিএনপি প্রস্তুত আছে। আমরা ইতিমধেই এ পরিকল্পনা শেষ করেছি, কেননা ক্ষমতায় যাওয়ার পরে এগুলো করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই আমরা নির্বাচনের আগেই এগুলো শেষ করে দেব, ইনশাআল্লাহ।’
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে ফরিদপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো মেগাপ্রজেক্টের দিকে যাব না। কারণ মেগাপ্রজেক্টের টাকা ফেরত দিতে সরকারের ১২টা বেজে যাচ্ছে। তার চেয়ে আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে জোর দেব। মেগাপ্রজেক্ট থেকে সরে এসে স্কিল ডেভেলপমেন্টে বিনিয়োগ বাড়াবে বিএনপি।
আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে এখান থেকে বেরিয়ে এসে এমন মডেলে যেতে হবে, যাতে এর সুফল প্রত্যেকটা নাগরিক পেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছি, কিন্ত চাকরি দেবে দেশের জনগণ। আমরা আগামীতে জনগণকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করছি, সরকারকে নয়। সরকারের হাতের ক্ষমতা কমিয়ে, মানুষকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।
কোনো গোষ্ঠী বিশেষের কাছে যাতে আমাদের অর্থনীতি জিম্মি না থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব কিছু সরকারকে করতে হবে এমন নয়, এ জন্য প্রাইভেট সেক্টরের পরিধি বাড়াতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরের অবদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য করা হবে। শিক্ষায় ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। বিনা মূল্যে জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।
এ জন্য আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অনেকগুলো ইনস্টিটিউশন সৃষ্টি করতে হবে। এসব কিছুই আমাদের আবিষ্কার নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এর মডেল চলছে। আমাদের শুধু সেসব দেশ থেকে কপি করে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সব নাগরিকের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এ জন্য বিএনপি একটি নতুন স্লোগান তৈরি করেছে, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ।’
তিনি বলেন, ‘একটা রেস্টুরেন্ট করতে গেলে ১৯টা অনুমতি নিতে হয় বাংলাদেশে। এই অনুমতি নিতে নিতে আর ব্যবসা করা হয়ে উঠে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যেই অনুমোদনের দরকার, সেটি ১৫ দিনের মধ্যে করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক ডিসিশনের মধ্যে টাইম ফ্রেম থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের ক্যাপিটেল মার্কেট শেয়ারবাজার নিয়ে গেছে। এই ক্যাপিটাল মার্কেটকে বড় করতে হবে। ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্টে আমাদের বিগ প্ল্যান রয়েছে।
আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট ঠিক করতে হবে। অনেকেই বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা বলছে পরিবেশটা আগে ঠিক করে দেন। আমাদের পাওয়ার, গ্যাস এবং গ্লোবাল ইন্টারনেট সিস্টেম গ্রো-আপ করা হবে। আমাদের বিনিয়োগগুলো এমন হবে, যেখানে আমাদের টাকা অপচয় হবে না, পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হবে না। বিশ্বে এখন গ্রিন ইকোনমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএস জুটমিলের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক, করিম গ্রুপের পরিচালক জাহাঙ্গীর মিয়া, ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পরিচালক চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ, ফরিদপুর চকবাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন, মামুন গ্রুপের শাহীন শাহাবুদ্দিন, শরীয়তপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, মাদারীপুরের লোকমান হোসেন মোল্লা, রাজবাড়ীর ইমারুল করিম ও এফসিসিআই সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর প্রমুখ।
এ সময় ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. মোদারেরস আলী ইছাসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় মহিলাদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, ফরিদপুর-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।
এমকে/টিকে