সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, রাত পোহালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার রায়। রায় কী হবে তা এখন সবার জানা। এই রায়ের পর অনেকের কাছে মনে হতে পারে, আগামীকাল যেন ঈদের আনন্দের দিন আবার কারো কাছে মনে হতে পারে বিষাদ সিন্ধু। কারণ গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে যে জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, গুম, দমন-পীড়ন হয়েছে -তার শিকার অসংখ্য মানুষ রায়ে হয়তো শোক ভুলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইবে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে হয়তো এটা হবে অত্যন্ত আনন্দের দিন। তাদের মনে হতে পারে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গেলেন, আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে গেল। এমন ভাবনাতেও অনেকে তৃপ্তি পেতে পারেন।
কিন্তু অন্যদিকে অনেকেই আমি জানি গভীরভাবে দুঃখিত হবেন -মুষড়ে পড়বেন, ব্যথিত হবেন।
গোপনে চোখের পানি মুছবেন কিন্তু প্রকাশ করতে পারবেন না। কোথাও কোথাও ককটেল ফুটবে, বাসে আগুন লাগবে -বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা এটাই। কিন্তু আসল প্রশ্ন -আমরা পেলাম কী? ফলাফল কী? এটি কি প্রত্যাশিত ছিল? না -এই অধঃপতন আজকের নয়; অনেক আগেই শুরু হয়েছে।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মোস্তফা ফিরোজ এসব কথা বলেন।
মোস্তফা ফিরোজ আরো বলেন, একবার যদি শেখ হাসিনা ভেবে দেখতেন -বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে দণ্ডিত করলেন, সেটা কি ঠিক হলো? প্রথমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ‘ভ্যানিশ’ করলেন, পরে বিচারিক প্রক্রিয়ার নামে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিলেন, অনেক নেতাকে মুছে দিলেন।এসব করতে করতে এখন তিনি নিজেই গভীর খাদে পড়লেন। হঠাৎ এক অভ্যুত্থানে তিনি শুধু ক্ষমতা হারালেন না -অনেক রক্তের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দিল্লিতে চলে গেলেন।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, রাত পোহালেই যে রায় আসবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম গণহত্যার দায়ে কোনো প্রধানমন্ত্রীর কঠিন শাস্তি এর আগে হয়নি। শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, ফাঁসি বা আজীবন কারাবাস -অবধারিতভাবেই।
অনেকে হয়তো তৃপ্তি পেতে পারেন -‘শেখ হাসিনা নেই’, ‘দিল্লিতে গিয়ে বেঁচে গেলেন’। না -এই কলঙ্কের তিলক নিয়ে বেঁচে থাকা কোনো বাঁচা নয়। এই দাগ মুছার নয়, চিরস্থায়ী।
রাজনৈতিকভাবে একে কেউ ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলুক, প্রতিহিংসার বিচার বলুক -দেশের মানুষ জানে গত ১৫ বছরে কী ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষতি শুধু শেখ হাসিনার নয়, ক্ষতি দেশের, ক্ষতি গণতন্ত্রের। আজকে খালেদা জিয়াকে ঘিরে বিএনপি একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনাকে ঘিরে আওয়ামী লীগ একটি প্রতিষ্ঠান। যদি এই দুই প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক হতো তাহলে আজকের এই অবস্থায় দেশকে পড়তে হতো না।
মোস্তফা ফিরোজ বলেন, প্রথমে শেখ হাসিনা চেষ্টা করলেন খালেদা জিয়া ও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে। এখন কেউ বলতে পারবে না -এটা ভুয়া বা প্রতিহিংসার মামলা। মাত্র এক বছর আগে দেড় হাজার মানুষের রক্তে ঢাকার রাস্তাগুলি লাল হয়েছিল -এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। শেখ হাসিনা নিজেও অস্বীকার করেননি -শুধু দায় চাপিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। কিন্তু দেশে তখন কে ক্ষমতায় ছিলেন? তিনিই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার নির্দেশ ছাড়া এসব হওয়া সম্ভব?
তিনি বলেন, এই পরিণতি শুধু শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের ক্ষতি নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রের ক্ষতি, রাষ্ট্রের ক্ষতি। যদি দুটি বড় দল গণতান্ত্রিক পথে এগোত -উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিত না। আজ গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে বিএনপির কাঁধে, সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দল। কিন্তু প্রধান একটি প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংস হয়ে গেল। এর দায় কার? আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার। তারা নিজেরাই মূল্যায়ন করুক -শেখ মুজিব যে ভুলটি করেছিলেন বাকশাল কায়েম করে, তার চেয়েও বড় ভুল করে তার কন্যা বিদায় নিলেন।
পিএ/টিএ