ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির বিপক্ষে। ইসলাম ও রাষ্ট্রের স্বার্থে যারা কাজ করবে, শিবির তাদের সহযোগিতা করবে, কিন্তু কখনো লেজুড়বৃত্তি করবে না। পচা-দুর্গন্ধময় রাজনীতি বাংলাদেশে আর চলবে না, আবু সাঈদের উত্তরসূরিরা চলতে দেবে না। এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না। এখন আর জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলারও সাহস কেউ পাবে না। ৫ আগস্টে এর কবর রচনা হয়ে গেছে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রশিবির আয়োজিত নবীনবরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রামে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে বাকৃবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবির। সেখানে অংশগ্রহণ করেন সহস্রাধিক নবীন শিক্ষার্থী।
উপস্থিত নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিবির সভাপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবটুকু ভালো করাটা সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানের কাজ। জীবনে সফল হতে সময় অপচয় বন্ধ করতে হবে, পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে এবং আল্লাহর নেয়ামত থাকতে হবে। আমাদের জন্য যেটা কল্যাণকর, সেটা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। পাশাপাশি, পৃথিবীর জন্য, মানবতার জন্য আমাদের কী অর্জন, তা আমাদের ভাবতে হবে। জীবনের একটা সময় আমাদের থামতেই হবে। তাই দুনিয়ার ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আখিরাতের সফলতার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। এজন্য শিবির শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুপ্রেরণামূলক কাজ করে, দিক-নির্দেশনা দেয়। আমরা আমাদের বিবেকের তাড়নায় কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির নামে কলকাতার সংস্কৃতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাই আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মানের সংস্কৃতি চর্চা করতে। আমরা আমাদের স্বকীয়তা বুঝতে শিখেছি, নিজের সক্ষমতা বুঝতে শিখেছি। এটা বুঝেই আমরা ঠিক করবো কার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করব।
দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে শিবিরের পরিকল্পনার বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে ৩০ দফা শিক্ষা প্রস্তাবনা দিয়েছে। সরকার এটি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষা, গবেষণা ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার জায়গা। আমাদের আছে প্রচুর সম্পদের উৎস। এসব উৎস নিয়ে ভাবলে, ব্লু ইকোনমি নিয়ে ভাবলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
১৯৯১ সালের পর এই প্রথম বাকৃবিতে ছাত্রশিবির নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় নবীন শিক্ষার্থীদের উপহার হিসেবে ব্যাগ, টি-শার্ট, কলমদানি, নোটবুক, চাবির রিং, বই ও কলম প্রদান করা হয়। পাশাপাশি নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাসের আদলে ফটোকর্নার ও প্রকাশনা কর্নার করা হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্রশিবির নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা প্রকাশের কর্নারও করা হয়। স্টেডিয়াম ফটক থেকে মঞ্চ পর্যন্ত স্থান পায় কোরআনের আয়াত, বাকৃবির ইতিহাস, জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচারণ। এছাড়াও বাকৃবি ছাত্রশিবিরের ছয় শহীদ, আবু সাঈদ, আবরার ফাহাদ ও কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করা হয় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে।
বাকৃবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু নাছির ত্বোহার সভাপতিত্বে নবীনবরণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রহুল আমিন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জোফার মো. মোসলেহ উদ্দিন, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো মশিউর রহমান ও অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় গবেষণা সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শরীফ মাহমুদ, বাকৃবি শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
টিজে/টিকে