চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২০ নভেম্বর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ১১৭ অফিস বন্ধ

দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান অংশীজন হিসেবে বিবেচিত ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের ব্যবসা থেকে ছিটকে দূরে সরে যাচ্ছে। বাজারে লেনদেন কম হওয়ায় ব্যবসা ছোট করে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ সংস্কার কাজের কথা জানিয়ে প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রমও বন্ধ করে রেখেছে। 

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ার লেনদেনের ব্যবসা করা ব্রোকাজের হাউসগুলোর ১১৭টি অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে শাখা অফিসের পাশাপাশি কয়েকটি ব্রোকাজের হাউসের প্রধান কার্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। 

তথ্যমতে, চলতি বছর সাদ সিকিউরিটিজের দুটি শাখা অফিস বন্ধ হয়েছে। তাদের মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জের অফিস দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সিকিউরিটিজ হাউসটির চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসাইন দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাজার এখন যে গতিতে চলছে, তাতে শুধু শাখা অফিস নয়, সব অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া উচিত। শাখা অফিস রেখে খরচ বাড়ানো ছাড়া, কিছুই হচ্ছে না। যে বাজারে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে একটি টাকাও বাড়েনি (আইপিও আসেনি), সেই বাজারে বিনিয়োগকারীই বা কেন থাকবে? আর বিনিয়োগকারী নেই বলেই তো আমরা ব্যবসা চালিয়ে নিতে না পেরে শাখা অফিস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’ 

বন্ধ রয়েছে ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি এটিকে সরাসরি বন্ধ না বলে সংস্কার কাজের জন্য আপাতত লেনদেন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে। এই সিকিউরিটিজ হাউসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. সাব্বির হুসাইন দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রধান কার্যালয়ে রিনোভেশন (সংস্কার) চলছে, এজন্য আপাতত লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে। একই ভবনের ৮ তলা থেকে ১১ তলায় অফিস সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে ডেকোরেট করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এই কাজগুলো হয়ে গেলেই লেনদেন কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।’

চলতি বছরে বন্ধ হয়েছে শার্প সিকিউরিটিজের একটি শাখা অফিস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানত দুটি কারণে আমাদের শাখা অফিস বন্ধ করা হয়েছে। একটি হলো- আমরা ক্লায়েন্টদের (বিও হিসাবধারীদের) সেবা অনলাইনে দেওয়ার প্রতি জোর দিচ্ছি। দ্বিতীয়ত, বাজারে যে পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে তাতে খরচ কমানোর কথাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্লাইন্ট ডিমান্ড (চাহিদা) বাড়লে তখন আবার শাখা চালু রাখার বিষয়ে চিন্তা করবো।’

বেনিফিশিয়রি অনার্স বা বিও হিসাবধারীদের লেনদেন সুবিধা দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে নিবন্ধিত ট্রেক সনদ নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এখন পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেছে ৩০৭টি ব্রোকারেজ হাউজ। এর মধ্যে গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ৫টি ব্রোকারেজ হাউজের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সচল থাকা বাকি ৩০২টি ব্রোকারেজ হাউসের মূল অফিস ও শাখা অফিসের সংখ্যা প্রায় ১৫০০টি। 

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মূল অফিস ও শাখা অফিসের অধিকাংশই রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বাজারে লেনদেন কম হওয়া, সনদ নবায়ন না হওয়া এবং অফিস সংস্কারের কথা জানিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রধান কার্যালয়সহ ১১৭টি শাখা অফিস। এর মধ্যে বিকল্প লেনদেন অফিস না থাকায় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের হিসাবধারী এখন শেয়ার লেনদেনও করতে পারছে না।

সনদ নবায়ন জটিলতায় এক সময়ের দাপুটে ব্রোকারেজ হাউস বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এই ব্রোকারেজ হাউসটির বিও হিসাবধারী মাসুদ আহমেদের পুঁজিবাজারে ১৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বিপরীতে তার কেনা সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য গত ৯ নভেম্বর দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগের মূলধন থেকে তার অবাস্তবায়িত ক্ষতি (আনরিয়েলাইজড লস) ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ওই বিনিয়োগকারী তার পোর্টফোলিওতে থাকা ৯টি সিকিউরিটিজের মধ্যে থেকে ১টি বিক্রি করার চেষ্টা করেও হাউজ বন্ধ থাকায় লেনদেন করতে পারছেন না।

ক্ষোভের কণ্ঠে মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘আমার টাকার খুবই প্রয়োজন ছিল। তাই লোকসান নিয়েই একটি শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ফোন দিয়ে জানতে পারলাম ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন বন্ধ রয়েছে। বিপদের সময়ে যদি টাকা তুলতে না পারি, এমন বিনিয়োগ দিয়ে কী হবে? লোকসান কাভার করতে পারলে এই বাজারে আর থাকবো না। এখানে লুটপাট করে বড়রা, আর দায় নিতে হয় আমাদের মতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।’

আরপি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় বাড়ল Nov 23, 2025
img
বিকেল ৫টার মধ্যে ঢাবির হল খালির নির্দেশ Nov 23, 2025
img
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল আরও ৮ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৭৭৮ Nov 23, 2025
img
রাজনীতি ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার দুধ দিয়ে গোসল Nov 23, 2025
img
বাস্তবে দেবদাকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি: জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু Nov 23, 2025
img
আয় কমছে টেসলার, বাজার বাড়ছে বিওয়াইডির Nov 23, 2025
img
মনের সৌন্দর্যই আসল, মুখের সৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী : অমিতাভ Nov 23, 2025
img
দেশরক্ষায় নিয়োজিতদের জন্য শাহরুখ খানের আবেগঘন বার্তা Nov 23, 2025
img
ভূমিকম্পের আগাম সতর্কীকরণ অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের Nov 23, 2025
img
যে যেতে চায় তাকে ধরে রাখা বৃথা: বিবেক ওবেরয় Nov 23, 2025
img
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ Nov 23, 2025
img
সত্য বললেই রাজনীতির তকমা, ক্ষোভ মিঠুনের Nov 23, 2025
img
যে শিক্ষকের মুখের ভাষা এত নোংরা, সে জাতিকে কী শেখাবে?- হাদিকে নীলা ইসরাফিল Nov 23, 2025
img
ব্যথা আর হতাশাকে চিহ্নিত করাই লড়াইয়ের শুরু: পরান বন্দ্যোপাধ্যায় Nov 23, 2025
জোটে হাওয়া বদল: কার পাশে যাচ্ছে এনসিপি? Nov 23, 2025
প্রশাসন নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে জামায়াত নে Nov 23, 2025
img
অভিবাসীবাহী নৌকা ঠেকাতে জাল ফেলার পরিকল্পনা ফরাসি কর্তৃপক্ষের Nov 23, 2025
img
চলতি মাসে বাংলাদেশে আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কা Nov 23, 2025
img
মার্কিন পপ গায়িকা কেটি পেরির সঙ্গে ট্রুডোর প্রেম, নীরবতা ভাঙলেন প্রাক্তন স্ত্রী Nov 23, 2025
img
নিজের শততম ম্যাচে সেরা মুশফিক, সিরিজ সেরা তাইজুল Nov 23, 2025