ভারত ও এর জনগণকে অভিনন্দন

১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করে আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয়তা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছি। প্রথমটি ছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতার পর, তখন আমি একজন পূর্ব পাকিস্তানি হয়েছিলাম। দ্বিতীয়টি ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল পূর্ব-পাকিস্তান।

অতঃপর ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যে একটি চাকরীর জন্য আবেদন করি এবং ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি, যা ঘটনাচক্রে আমাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্বের দিকে ধাবিত করে। অবসর নেয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যেই বসবাস করছি। আর মাঝে মধ্যে আমার জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা লিখি।

২০২০’এর এই নতুন বছরে, ভারতীয় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার জন্যে, যা তারা অবশেষে অর্জন করতে পেরেছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের পর ভারত স্বাধীন হয়েছিল, তখন অবশ্য প্রকৃত ভারত ভেঙ্গে দু’টি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। তিন বছরের ব্যবধানে ভারত তার নিজস্ব সংবিধান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে এটি প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে। ভারত ব্রিটিশ সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে সরকার প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করবেন এবং একজন রাষ্ট্রপতি (সংসদ দ্বারা নির্বাচিত) রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করবেন।

এই পরিবর্তনগুলি খুব দ্রুত ঘটেছিল। হায়দরাবাদ, গোয়া ও সিকিমের অন্তর্ভুক্তিও সমান দ্রুততার সঙ্গেই ঘটেছিল। তবে অন্যান্য পরিবর্তনগুলি ঘটতে সময় নিয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, পাকিস্তানের সঙ্গে জল ভাগাভাগির যে চুক্তিটি ভারত করেছিল সেটি এখনও বহাল আছে। তবে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা- কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তারা কমপক্ষে তিনবার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং আবারও যে কোনো সময় লড়াই শুরু হতে পারে।

এদিকে, গেল ২০ বছরে ভারত ভালো অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই গতি এখনও খুব ধীর। অনেকেই এখনও বলেন যে, গ্রামীণ ভারতে “থানাদার এখনও মাই-বাপ”। কার্যকর কোনো স্থানীয় সরকার না থাকার ফলে গণতন্ত্রের সুফল জনসাধারণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। তবে শিক্ষা ধীরে ধীরে তার ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাই অবশেষে সমস্ত কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনবে।

ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার কথা ছিল, অন্তত এমনটি দাবি করা হয়। তবে অতি সম্প্রতি (বিজেপি) সরকার, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জাতীয়তা আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন করেছে। এই নতুন আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে বদলে দিয়েছে, কারণ এটি মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক। তবে এবার জনগণ বিদ্রোহ করেছে। ভারতের প্রায় প্রতিটি কোণেই ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। এটি প্রমাণিত যে, শিক্ষার আলো অন্ধকার কোণগুলিতেও প্রবেশ করেছে।

জনগণ এখন সমতা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য ভাবিত। মানবতাকে তারা ধর্মীয় বাধা সমূহের উপরে স্থান দিয়েছে। হ্যাঁ, ভারত এখন সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা ভারত ও এর জনগণকে অভিনন্দন জানাই। হয়তো এই অনুপ্রেরণা পাকিস্তান থেকে এসেছিল, সেখানে সম্প্রতি ভারতীয় শিখদের জন্য ভিসা ছাড়াই পাকিস্তানে অবস্থিত গুরু নানকের জন্মস্থান পরিদর্শন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

লেখকের লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন নাবিল জাহাঙ্গির 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কুমিল্লায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ Nov 16, 2025
img
পুলিশকে কামড়ে পালিয়েছেন ছাত্রদল নেতা Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার রায় আগামীকাল, সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি Nov 16, 2025
img

বাংলাদেশ দূতাবাস, মানামা

বাহরাইন প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক মোবাইল কনস্যুলার ক্যাম্পের আয়োজন Nov 16, 2025
img
ভোটারদের কেন্দ্রে আনা ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশের জন্য দলগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ: সিইসি Nov 16, 2025
img
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে সবুজায়ন করবে ডিএনসিসি Nov 16, 2025
img
১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করতে পারি: শাহীন আফ্রিদি Nov 16, 2025
img
বাংলাদেশ এক পা এগোলে, পাকিস্তান দুই পা এগিয়ে আসবে: মাওলানা ফজলুর Nov 16, 2025
img
যুক্তরাজ্যে স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে সময় লাগবে ২০ বছর! Nov 16, 2025
img
যারা একসময় মজলুম ছিল, তারা এখন জালিম সাজছে: তথ্য উপদেষ্টা Nov 16, 2025
img
মিঠুনদা আমার বাবার মতো: দেব Nov 16, 2025
img
নিজের প্রতি বিশ্বাসই শাহরুখকে কিং করেছে: শিল্পা শেট্টি Nov 16, 2025
img
ইরান ভয়াবহ সংকটে, মসজিদে দোয়া Nov 16, 2025
img
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণে পথচারী আহত Nov 16, 2025
img
অনিয়মের প্রমাণ পায়নি বিসিবি Nov 16, 2025
img
বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ: সেলিমা রহমান Nov 16, 2025
img

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬টি দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু Nov 16, 2025
img

মো. ফখরুল ইসলাম

‘তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে নোয়াখালী হবে সিঙ্গাপুর’ Nov 16, 2025
img
সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে মধ্যরাতে আগুন Nov 16, 2025
img
স্কুলের গুরুত্ব তখনই বোঝা যায়, যখন আমরা স্কুল থেকে বেরিয়ে আসি: সোনাক্ষী সিনহা Nov 16, 2025