আর্জেন্টাইন ফুটবলে শোকের ছায়া। জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার ওমর সাউতো ৭৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সাউতোর সুবাদেই লিওনেল মেসি স্পেন নয়, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলছেন।
এএফএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “অপরিমেয় শোকের সঙ্গে আমরা ওমার সাউতোর মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছি। জাতীয় দলের প্রতি তার দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা ও মানবিকতা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
আর্জেন্টিনা ফুটবল সভাপতি ক্লাউদিও তাপিয়া বলছেন, “আজ আকাশ আরও একটি আর্জেন্টাইন আত্মাকে গ্রহণ করল। জাতীয় দলের জন্য তুমি যা করেছ, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তুমি সবসময়ই উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
এদিকে, ওমর সাউতোর স্মৃতিতে হৃদয়স্পর্শী বার্তা দিয়েছেন মেসি, “আপনি সবসময়ই পাশে ছিলেন এবং আপনিই সেই মানুষ, যিনি এএফএ’র নজরে আমাকে এনেছিলেন। অসাধারণ একজন মানুষ, জাতীয় দলের হয়ে যারা খেলেছে, তাদের সবার কাছেই আপনি স্মরণীয়। আপনার ছাপ চিরদিন রয়ে যাবে। আমরা আপনাকে কখনো ভুলব না, ওমর। শান্তিতে ঘুমান।”
মেসির জন্ম আর্জেন্টিনায় হলেও বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়ায় বেড়ে উঠে কাতালান ক্লাবটির ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে মেসির বার্সা সতীর্থদের অনেকেই স্পেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। চাইলেই স্পেন জাতীয় দলের জার্সি বেছে নিতে পারতেন। সুযোগও এসেছিল, এমনকি ‘লা রোজাদের’ হয়ে খেলার দ্বারপ্রান্তেই নাকি ছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেসি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেসির নিয়তি লেখা ছিল আর্জেন্টিনাতেই।
মেসির জাতীয় দলে আগমন নিয়ে সাউতো যেমন ছিলেন পথপ্রদর্শক, তেমনই ছিলেন রোমাঞ্চকর এক গল্পের নায়কও। নাইজেরিয়ার অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপে স্পেনের কোচিং স্টাফ তাকে বলেছিল, “বার্সেলোনার ছেলেটি কোথায়? ও-ই সবার সেরা।” দেশে ফিরে কোচ হুগো তোকাল্লি সাউতোকে দায়িত্ব দেন মেসিকে খুঁজে বের করার।
মেসিকে ফোন করে খুঁজে বের করা, দাদির মাধ্যমে নম্বর পাওয়া, এরপর বাবা হোর্হে মেসির সেই প্রতীক্ষিত প্রতিক্রিয়া—“অবশেষে ডাকছে! আমার ছেলে আর্জেন্টিনার হয়েই খেলতে চায়।”—এসবই এখন আর্জেন্টাইন ফুটবলের কিংবদন্তি অধ্যায়।
স্পেন যাতে মেসিকে না নিতে পারে, সে জন্য সাউতো-তোকাল্লি যুগল নকল ডাকে পরাগুয়ে ও উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন। সেই সময়টাকেই সাউতো মনে করতেন মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
এএফএতে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন ওমর সাউতো। গত অক্টোবরেই সংস্থার সাধারণ সভায় তাকে সম্মান জানানো হয়েছিল। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর তার বিদায়ে শোকস্তব্ধ পুরো আর্জেন্টিনা ফুটবল।
এবি/টিকে