হংকংয়ের তাই পো এলাকার একটি বিশাল আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার (২৬শে নভেম্বর) দুপুরে ঘটা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক দশকের মধ্যে হংকংয়ে ঘটা অন্যতম প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ২৮০ জন বাসিন্দা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।
হতাহতের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিহত ৭৫ জনের মধ্যে একজন দমকলকর্মীও রয়েছেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন আরও ৭৬ জন, যাদের মধ্যে ১১ জন দমকলকর্মী। আবাসিক কমপ্লেক্সটিতে মোট সাতটি ভবন এবং ১,৯০০টিরও বেশি ফ্ল্যাট রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে প্রায় ৪,০০০ মানুষ বসবাস করতেন।
বুধবার দুপুরে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবন সংস্কারের জন্য বাইরের অংশে বাঁশের ভারা (স্ক্যাফোল্ডিং) এবং জানালা ঢেকে রাখার জন্য ফোম ও প্লাস্টিকের আস্তরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, এই দাহ্য পদার্থগুলোর কারণেই আগুন অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় চরম অবহেলার অভিযোগে নির্মাণ সংস্থার দুই ব্যবস্থাপক এবং একজন পরামর্শক প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আইলিন চুং লাই-ই বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের চরম অবহেলার কারণেই আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছে এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।"উদ্ধার তৎপরতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো হংকংয়ে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা বা 'লেভেল-৫ ফায়ার অ্যালার্ম' জারি করা হয়। আগুন নেভাতে ১৪০টিরও বেশি দমকল যান এবং ৮০০-এর বেশি জরুরি কর্মী ও দমকলকর্মী মোতায়েন করা হয়। আশেপাশের দুটি কমপ্লেক্স থেকেও বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৯০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাকে আটটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তার জন্য তিনি ৩০ কোটি হংকং ডলারের (প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার) একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং বেইজিংয়ের হংকং ও মাকাও বিষয়ক কার্যালয়কে স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র: আনাদোলু
এসএস/টিএ