পূর্বাচলে মা শেখ রেহানার নামে প্লট বরাদ্দ নিতে বিদেশ থেকে ফোন করে টিউলিপ সিদ্দিক প্রভাব খাটিয়েছেন বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪। আজ সোমবার বিচারক মো. রবিউল আলম প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলার এই রায় ঘোষণা করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ কৌঁসুলি (পিপি) তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছর, শেখ রেহানাকে সাত বছর ও তাঁর মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ; সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ ১৪ জনকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হাসিনা, রেহানা, টিউলিপসহ দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রত্যেককে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
গত ২৫ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়। আজ বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়। আদালত রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান।
রায়ে আদালত বলেন, আসামি রেহানা সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৩ নম্বর প্লটের বরাদ্দ বাতিল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দেওয়া হলো।
টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে আদালত রায় ঘোষণার সময় বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক বিদেশে থেকে ফোন করে তাঁর মায়ের নামে প্লট বরাদ্দ নিতে প্রভাব খাটিয়েছেন বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হয়েছে। মায়ের প্লট বরাদ্দে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সাজা দিয়েছেন আদালত। অন্য আসামিরা সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকারি কর্মচারী আইন এবং বরাদ্দসংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাঁরা সবাই ফৌজদারি অসদাচরণ করেছেন বলে প্রমাণ হয়েছে। তাঁদের সবাইকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে।
একপর্যায়ে আদালত প্রশ্ন রাখেন, অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন—তিনি (টিউলিপ) এ দেশে নেই, তাঁর বিচার করার এখতিয়ার আদালত রাখেন কি না?
জবাবে আদালত বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এ দেশের কোনো অপরাধী বিদেশে বাস করলেও তাঁর বিচার করার এখতিয়ার বাংলাদেশের আদালত রাখেন। সাক্ষ্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক বিদেশ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলে তাঁর মায়ের নামে প্লট বরাদ্দ দিতে প্রভাবিত করেছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণ
রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, যে প্রক্রিয়ায় শেখ রেহানা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, তা দুর্নীতি। বিচারক বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে বোন শেখ রেহানাকে প্লট দিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মা-খালাকে প্ররোচনা দিয়েছেন টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক।
রায় ঘোষণার সময় পবিত্র কোরআনের সুরা মায়িদার একটি আয়াতের ব্যাখ্যা দেন বিচারক। আদালত বলেন, মহান আল্লাহর বাণী হলো-‘পাপ ও জুলুমের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহায়তা কোরো না।’ অথচ আবাসন সুবিধা থাকার পরও জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট নিয়েছেন শেখ রেহানা।
আদালত বলেন, বর্তমানে দেশে দুর্নীতি একটি রোগে পরিণত হয়েছে। গোটা সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে এ রোগ। তাই সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১২ জন হলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মো. অলিউল্লাহ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা পিএএ, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জি. ও অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম এবং সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ।
টিকে/