হার্টের সমস্যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা এবং গবেষকরা বলছেন যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি স্বতন্ত্র ঝুঁকি থাকে।
ভারতীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তবে ডায়াবেটিস কার্ডিওমায়োপ্যাথির দিকে পরিচালিত করে, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
গুরুগ্রাম নারায়ণ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের এইচওডি ও পরিচালক সতীশ কৌল জানিয়েছেন, “ডায়াবেটিস এথেরোস্ক্লেরোসিসের জন্যও একটি বড় ঝুঁকির কারণ এবং এটি শেষ পর্যন্ত করোনারি ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে। এটি হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন বাড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, “মায়োকার্ডিয়াল ইনফেশনের কারণে হৃৎপিণ্ডের পেশী দুর্বল হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়, যা কনজিস্টিভ হার্ট ফেল্যুর ঘটায়।”
মায়ো ক্লিনিক প্রসিডিংস জার্নালে প্রকাশিত বর্তমান সমীক্ষা অনুসারে গবেষকরা হার্ট ফেল্যুরের কারণ হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিসের প্রভাবকে চিহ্নিত করেছেন।
তারা হাইপারটেনশন, করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং ডায়াস্টলিক ফাংশন বিবেচনা করে একটি জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর হারও সমীক্ষা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওলমস্টেড কাউন্টির ২ হাজার ৪২ জন বাসিন্দার ওপর প্রাথমিক সমীক্ষা চালানো হয়। এদের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ১১৬ জন অংশগ্রহণ করে।
১০ বছর ধরে গবেষণা চলাকালে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ২১ শতাংশের হার্ট ফেল্যুর হয়েছিল। অন্যদিকে ডায়াবেটিসবিহীন মাত্র ১২ শতাংশ রোগীর হার্ট ফেল্যুর হয়েছে। গবেষণাটি দেখায় যে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত লোকেরা হার্ট ফেল্যুরের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আমেরিকার মায়ো ক্লিনিকের গবেষণার সিনিয়র লেখক হরং চেন বলেছেন, “মূল কথা হচ্ছে ডায়াবেটিস মেলিটাস হলো হৃদরোগের বিকাশের জন্য একটি মারাত্মক ঝুঁকির কারণ।”
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন কীভাবে?
সময়মত ওষুধ গ্রহণ, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনুসরণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চলুন কিছু বিষয় জেনে নিই, যা ডায়াবেটিস এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে-
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
ওজন ব্যবস্থাপনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অতিরিক্ত ওজন টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
কম শর্করা গ্রহণ করুন
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত লোকদের জন্য পরিশোধিত শর্করা খাওয়া ক্ষতিকর। কারণ এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়। জাঙ্ক ফুড, ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার অবশ্যই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া উচিত, কারণ এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রায় হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
আপনার রুটিনে শরীরচর্চা অন্তর্ভুক্ত করুন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই নিয়মিত শক্তি প্রশিক্ষণ বা ওজন প্রশিক্ষণ করতে হবে। কারণ এটি শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে। শক্তি প্রশিক্ষণের নিয়মিত অনুশীলন ডায়াবেটিসের সূত্রপাত রোধ করতে পারে।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার বেছে নিন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খাওয়া টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘমেয়াদে হ্রাস করতে পারে।
কম চাপ নিন
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আপনি অতিরিক্ত মানসিক চাপ ক্ষতিকারক হতে পারে। স্ট্রেসের ফলে গ্লুকাগন ও করটিসোলের মতো হরমোন নিঃসরণ হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা তৈরি করে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
টাইমস/এনজে/জিএস