ট্রাম্পের দেয়া সময়সীমা শেষ, ধীরে ধীরে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে আসছে মাদুরোর

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বেশ অনেকটাই বেড়েছে। সমুদ্রপথে মাদক পাচারকে কারণ দেখিয়ে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমার আশপাশে একের পর এক নৌযানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এমনকি দেশটির আশপাশে রণতরীসহ হাজারও সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এমন অবস্থার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দেশ ছাড়ার আলোচনা নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি মাদুরোর সঙ্গে ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন এবং ওই ফোনালাপে মাদুরো বিভিন্ন শর্ত দেন। তবে তার শর্তগুলো নাকচ করে দেয়ার পর মাদুরোর নিরাপদে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আরও জটিল হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। মূলত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সামনে সব রাস্তায় এখন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের গ্যারান্টিতে নিরাপদে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দেশ ছাড়ার সুযোগ দ্রুত সংকীর্ণ হয়ে আসছে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাত্র কয়েক মিনিটের এক ফোনালাপ হয় এবং সেখানেই মাদুরোর করা বেশ কয়েকটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প। এমন তথ্যই জানিয়েছেন ওই ফোনলের বিষয়ে অবগত চারটি সূত্র।

গত ২১ নভেম্বর ট্রাম্প ও মাদুরোর মধ্যে ফোনালাপটি হয়। তবে এর আগে থেকেই উভয় দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও ওই ফোনকলের আগেই ক্যারিবিয়ান সাগরে কথিত মাদকবাহী নৌকায় হামলা, ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে সামরিক অভিযানের হুমকি এবং ‘কার্টেল দে লস সোলেস’কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ‘কার্টেল দে লস সোলেস’-এর সঙ্গে মাদুরো নিজেও জড়িত আছে। তবে মাদুরো ও তার সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, ভেনেজুয়েলার তেলসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সরকার পরিবর্তন করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।

তিনটি সূত্রের তথ্যমতে, ফোনালাপে মাদুরো ট্রাম্পকে জানান— তিনি দেশ ছাড়তে প্রস্তুত, তবে শর্ত হলো তার ও পরিবারের জন্য পূর্ণ আইনি দায়মুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করা প্রধান মামলাটি বাতিল করতে হবে।

ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, মাদুরো ভেনেজুয়েলার ১০০ জনেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তার ওপর থাকা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধও করেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘন, মাদক পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

দুই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাদুরো আরও চান— নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার থাকুক।

রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প-মাদুরোর ফোনকলটি ১৫ মিনিটও স্থায়ী হয়নি। তাতে ট্রাম্প তার বেশিরভাগ অনুরোধই নাকচ করেন। শুধু জানান, মাদুরো চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে পছন্দের কোনো দেশে চলে যেতে পারেন।

সেই হিসেবে নিরাপদে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়সীমা শেষ হয় গত শুক্রবার। এরপরই শনিবার ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা বন্ধ বলে ট্রাম্প ঘোষণা দেন। দুই সূত্র একথা জানিয়েছে।

এদিকে সংবাদমাধ্যম মায়ামি হেরাল্ড এই ফোনকলের কয়েকটি দিক আগে প্রকাশ করলেও শুক্রবারের ডেডলাইনের তথ্য আগে কোথাও প্রকাশ পায়নি।

পরে রোববার ট্রাম্প স্বীকার করেন, তিনি মাদুরোর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। হোয়াইট হাউসও এ বিষয়ে আরও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। আর সরকারি মন্তব্যের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়ও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মাদুরো ভেনেজুয়েলার বৈধ প্রেসিডেন্ট নন। গত বছরের নির্বাচনেও তিনি জয় দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বহু দেশ সেটিকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের মতে, সে নির্বাচনে বিরোধী দলই জয় পেয়েছিল।

এমন অবস্থায় সোমবার সমর্থকদের এক মিছিলে মাদুরো ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য’ বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন।

তবে আগের সময়সীমা শেষ হওয়ায় মাদুরো এখন আবারও নিরাপদে দেশ থেকে প্রস্থানের নতুন কোনও প্রস্তাব দিতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত। অপরদিকে, ভেনেজুয়েলাকে চাপের মধ্যে রাখার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে সোমবার ট্রাম্প আলোচনা করেছেন বলে জ্যেষ্ঠ এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটন–ভিত্তিক একটি সূত্র জানায়, সমঝোতার ভিত্তিতে মাদুরোর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগটি এখনও সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়নি। তবে বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

অন্যদিকে মাদুরোর প্রশাসন ট্রাম্পের সঙ্গে আরেকটি ফোনালাপের অনুরোধ করেছে বলে তিনটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।

আইকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের রুশ তেল আমদানি কমানো দীর্ঘস্থায়ী হবে না : ক্রেমলিন Dec 02, 2025
img

টিআইবি

সামাজিক নিরাপত্তায় আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র মোট বাজেটের ০.৫১ শতাংশ Dec 02, 2025
img
রশ্মিকা ও কৃতিকে নিয়ে ভিজ্যুয়াল চর্চা, কাহিনি হারাচ্ছে প্রেক্ষাপট Dec 02, 2025
img
কেমন আছে কনটেন্ট ক্রিয়েটর আল আমিন! Dec 02, 2025
img
ইসলামপন্থিরা ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি থাকবে না: রেজাউল করীম Dec 02, 2025
img
বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় ব্রিটিশ চিকিৎসক টিম আসবে বুধবার Dec 02, 2025
img
ব্যাপারটাকে ভীষণ এনজয় করি : সৌরভ Dec 02, 2025
img
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন শিবিরের সাবেক নেতা Dec 02, 2025
img
নায়িকাদের চোখে নিরাপদ এবং সম্মানজনক নায়ক জিৎ: রবি কিনাগী Dec 02, 2025
img
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক পশ্চাৎ যাত্রার ধারা ঘুরিয়ে দিতে পারে : ইইউ রাষ্ট্রদূত Dec 02, 2025
img
কুকুরছানার ঘটনায় অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাইলেন নিলয় Dec 02, 2025
img

ফেডারেশন কাপ

ফর্টিজকে হারিয়ে গ্রুপের শীর্ষে মোহামেডান Dec 02, 2025
img
অপরাধীর কঠোরতম শাস্তি দাবি করলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান Dec 02, 2025
img
এবার কমপ্লিট শাটডাউনে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা Dec 02, 2025
img

৮টি কুকুরছানা হত্যা

নিউজটা দেখার পর থেকে স্বাভাবিক হতে পারছি না: তৌসিফ মাহবুব Dec 02, 2025
img
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় চীনের পর এবার যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দল আসছে Dec 02, 2025
img
নোংরা মানসিকতার উত্তর দেব কেন: মানসী সেনগুপ্ত Dec 02, 2025
img
১০ ফেব্রুয়ারি ভোটের ইঙ্গিত দিল ইসি Dec 02, 2025
আমরা চাইলে খেলা হবে, বোর্ড চাইলে খেলা হবে না Dec 02, 2025
img
বেগম জিয়াকে নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যেও আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছি: রিজভী Dec 02, 2025