ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ডিভাইস, ডেটা ও সেবাখাতে একযোগে নীতি–সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে করে স্মার্টফোন প্রবেশাধিকারের বিস্তার, সুলভ ডেটা এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে। ফলে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর আরও ত্বরান্বিত হবে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে স্মার্টফোন ও ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনার বাংলাদেশের কারখানা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইনস্পিরেশন স্মার্ট ও অনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। সেজন্য অনার গ্রুপ গ্লোবাল, স্মার্ট টেকনোলজি ও স্মার্ট হাইটেক পার্ক ইন্ডাস্ট্রিজকে আন্তরিক জানাই। বর্তমানে দেশে স্মার্টফোনের প্রবেশহার ৪১–৪৫ শতাংশের মধ্যে। ২০২১ সালে বছরে প্রায় এক কোটি স্মার্টফোন বিক্রি হলেও ভুল নীতি ও অবৈধ আমদানির কারণে তা কমে দাঁড়ায় ৮০ লাখে। অথচ পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তানে এই হার যথাক্রমে ৭৫ ও ৬২ শতাংশ। তাই আঞ্চলিক মানে পৌঁছাতে হলে নীতিগত কাঠামো বদলে স্মার্টফোনের প্রবেশাধিকার বাড়ানো জরুরি। কারণ নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে স্মার্টফোনই প্রধান মাধ্যম।
তিনি বলেন, সংযোগ ও ডিভাইসে প্রবেশাধিকার, ডেটা অ্যাক্সেস এবং সেবার অ্যাক্সেস এই তিন ক্ষেত্র একসঙ্গে এগোতে পারলে দেশের ডিজিটাল ইকোসিস্টেম শক্তিশালী হবে। এজন্য আইসিটি বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি সম্মিলিতভাবে শিল্পের গতিশীলতা বদলে নীতিমালা সংস্কারে কাজ করছে। স্মার্টফোন উৎপাদন লাইনের দৈর্ঘ্য ও প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে এটি কর্মসংস্থানবান্ধব শিল্প। একটি উৎপাদন লাইন ইতিমধ্যে উদ্বোধন হয়েছে। আগামী বছর তা বাড়বে চারটিতে। এতে শুধু কর্মসংস্থানই তৈরি হবে না, স্থানীয়ভাবে দক্ষ কর্মী ও উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগও সৃষ্টি হবে।
তিনি জানান, সরকার অবৈধ স্মার্টফোন আমদানি রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইএর কার্যক্রম সক্রিয় করা হবে। একই সঙ্গে আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদনের শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে। স্থানীয় উৎপাদনকে আকর্ষণীয় রাখতে তাদের জন্য আরও সুবিধাজনক শুল্কনীতি চালু থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। ডেটা অ্যাক্সেস উন্নত করতে তিনি জানান, টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সিং নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে। যাতে সহজ ও স্বচ্ছ লাইসেন্সব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তির কাজ চলছে। যা দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বহুগুণ বাড়াবে। সাইবার নীতি, ডেটা সুরক্ষা ও ডেটা গভর্নেন্স নীতিও বিশ্বমানের করে সাজানো হচ্ছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, স্থানীয় উৎপাদন ও বৈধ আমদানি বাড়লে দেশের স্মার্টফোন প্রবেশহার আগামী কয়েক বছরে ৪০ শতাংশ থেকে ৭০–৮০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। কারণ, বর্তমানে ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৪২–৪৫ শতাংশ স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে। এটি বিশাল সম্ভাবনার ইঙ্গিত। তাই অনারকে চারটির বেশি প্রোডাকশন লাইন চালুর কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
হাইটেক পার্কের নীতি সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্লট বরাদ্দ নীতি আরও স্বচ্ছ ও কেপিআই–ভিত্তিক করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশও মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়। সরকারের নীতি–সহায়তা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় অনারের মতো বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি আস্থা পাবে, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য দেশ-বিদেশে আরও পরিচিতি পাবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম আমিরুল ইসলাম এবং স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।
ইউটি/টিএ