মাহিরা খানকে সবাই চেনে পর্দার সাবলীল অভিনয় আর গ্ল্যামারের জন্য। কিন্তু তার সাফল্যের আলোর পেছনে লুকিয়ে ছিল গভীর এক অন্ধকার অধ্যায়, যার কথা তিনি খুব কমই বলেছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে অবশেষে খুলে বললেন সেই সময়ের কথা—এক সময়ে যেটা তাকে মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে দিয়েছিল।
২০১৭ সালে শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনীত রইস মুক্তির পর মাহিরার নাম ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। বলিউডে কাজের সুযোগ, তাও আবার শাহরুখের বিপরীতে—এ যেন তার জন্য স্বপ্নপূরণ। কিন্তু সেই স্বপ্নে বড় ধাক্কা নিয়ে আসে ২০১৬ সালের উরি হামলা। হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়। ঠিক তখনই সবকিছু বদলে যায় মাহিরার জীবনে।
তিনি জানান, শুরুতে ভয় পাননি। কিন্তু হুমকি আসতে শুরু করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য, বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট—সবকিছু মিলিয়ে তিনি ফোন ধরতেও ভয় পেতেন। সবচেয়ে দুঃখ পেয়েছিলেন একটাই কারণে—রইসের প্রচারে ভারত যেতে না পারায়। শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনীত ছবিটি নিজ দেশে মুক্তি পাবে, সেই আশায় ছিলেন তিনি।
কিন্তু পরিস্থিতি তার ভেতরে জমে থাকা উদ্বেগ আর বিষণ্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ভারতের দর্শকরা ছবিটি মুক্তির পর নানা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালে তিনি আরও ভেঙে পড়েন। একসময় প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। সেই ঘটনার পর শুরু হয় নিয়মিত চিকিৎসা।
মাহিরা বলেন, কয়েকজন থেরাপিস্টের কাছে গিয়েও স্বস্তি পাননি। পরে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তাকে জানান, তিনি প্যানিক ডিপ্রেশনে ভুগছেন। দীর্ঘ ছয় সাত বছর তিনি ওষুধের ওপর নির্ভর করে লড়াই করেছেন এই মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে। সেই অন্ধকার সময় এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
তিনি জানান, গত বছর এমন অবস্থায় পৌঁছেছিলেন যে, বিছানা থেকে উঠেও বাথরুমে যেতে পারছিলেন না। সেই অসহায় অবস্থায় তিনি শুধু প্রার্থনা করেছিলেন একটু আলো দেখার জন্য। আবার চিকিৎসা শুরু করার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারেন, ফিরে পান হাসি আর স্বস্তির অনুভূতি।
মাহিরার পরামর্শ, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন কোনো কল্পিত দুর্বলতা নয়। এটি বাস্তব, যেমন অন্য যেকোনো অসুস্থতা। তাই সময়মতো চিকিৎসাই পারে কাউকে সেই অন্ধকার জায়গা থেকে টেনে বের করতে।
এসএন