থানকুনির রোগ নিরাময় গুণ

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারে দিন নতুন নতুন রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে। তার মানে এই নয়, ওষধি গাছের কদর কমে গেছে। এখনো ঘরোয়াভাবে টাইফয়েড জ্বর, ডায়রিয়া, কলেরা, পেটের পীড়ার মতো রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন ওষধি গাছ ও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। তার মধ্যে একটি থানকুনি পাতা।

থানকুনি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর ল্যাটিন নাম centella aciatica। অঞ্চলভেদে থানকুনি পাতাকে আদামনি, তিতুরা, টেয়া, মানকি, থানকুনি, আদাগুনগুনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, নামে ডাকা হয়।

গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ওষধি সব গুণ। এর রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে। খাদ্য উপায়ে এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে, তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার।

চলুন জেনে নিই, থানকুনি পাতার ভেষজগুণ সম্পর্কে-

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়
নানাভাবে সারা দিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সহজ সমাধান পেতে খেতে পারেন থানকুনি পাতা। সেজন্য আধা লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিছরি এবং অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর সেই মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা এক সপ্তাহ করলেই উপকার মিলবে।

ক্ষতের চিকিৎসা করে
থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়োনিনস এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেঁটে লাগিয়ে দিন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়
থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতারও উন্নতি করে। কারণ থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে সঠিকভাবে হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড ও ফাইটোকেমিকাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর হয়
আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা খুবই কার্যকর। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে এই পাতা খেতে হবে। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রণটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

পেটের অসুখ কমাতে
অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১ টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভালো করে মিশিয়ে বেটে নিন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যেকোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সঙ্গে কৃমির প্রকোপও কমে।

কাশির প্রকোপ কমে
২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই।

জ্বরের প্রকোপ কমে
সিজন চেঞ্জের সময় যারা প্রায়শই জ্বরের ধাক্কায় কাবু হয়ে পরেন, তাদের তো থানকুনি পাতা খাওয়া জরুরী। কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে, জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরা যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: