বেশিরভাগ সময় ভাইরাসকে আমরা স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক বলে মনে করি। তবে সব ভাইরাস কিন্তু আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিছু ভাইরাস আছে, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
তবে এটা ঠিক যে ভাইরাস বিভিন্ন মারাত্মক রোগের জন্য দায়ী, যেমন- বসন্ত, হেপাটাইটিস, এইচআইভি ও রেবিজ। এ কারণে ভাইরাসের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই বিজ্ঞানীরা বেশি চিন্তিত। তবে অনেক ভাইরাস মানুষের নূন্যতম ক্ষতিও করে না।
মানব স্বাস্থ্যের পক্ষে ইতিবাচক এসব ভাইরাসের ভূমিকা এখনও তুলনামূলকভাবে রহস্যজনক। তবে বিভিন্ন গবেষণার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এসব উপকারী ভাইরাসের গুরুত্ব আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।
আমাদের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক অণুজীবের এবং ভাইরাসের এই বহর মাইক্রোবায়োমে বসবাস করে। “মাইক্রোবায়োম” শব্দটি শুনলে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যাকটেরিয়ার কথা চিন্তা করি। তবে মাইক্রোবায়োম একটি নির্দিষ্ট পরিবেশের সমস্ত অণুজীবের যোগফল। সুতরাং, ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও মাইক্রোবায়োমে অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ভাইরাস ও ছত্রাক (মাইকোবায়োম) অন্তর্ভুক্ত থাকে।
আমাদের মাইক্রোবায়োমে বসবাসকারী বেশিরভাগ ভাইরাস ব্যাকটেরিওফাজ জাতীয়। যেখানেই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিওফাজ থাকে।
ব্যাকটেরিওফাজ সমূহ জীবনের প্রাথমিক পর্যায় থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে। একটি গবেষণায় নবজাতকের প্রথম মল পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব সেখানে পাওয়া যায় নি।
তবে, জন্মের মাত্র এক সপ্তাহ পরে, বাচ্চার মল পরীক্ষা করে প্রতি গ্রামে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ভাইরাস কণা পাওয়া গেছে। যার বেশিরভাগ ছিল ব্যাকটেরিওফাজ। এসব ভাইরাস সত্যিই আমাদের আজীবন সহচর।
প্রতিটি মানুষের ব্যাকটেরিওফাজ সমূহের একটি পৃথক ধরণ রয়েছে, যাকে সম্মিলিতভাবে ফেজোম হিসাবে উল্লেখ করা হয়। প্রায় একই খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত লোকদের ব্যাকটেরিওফাজ সমূহ অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে সামগ্রিকভাবে, প্রতিটি ব্যক্তির ফেজোম মারাত্মকভাবে পরিবর্তিত হয়।
ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সংক্রামিত করে, তাদের কোষের নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিজেদের জিনগত উপাদানসমূহের প্রতিলিপি তৈরি করতে সেগুলি ব্যবহার করে।
গবেষণার দ্বারা এটি স্পষ্ট যে, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলি আমাদের স্বাস্থ্যকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তাই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলিতে সংক্রামণকারী ভাইরাসও আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
ব্যাকটেরিওফাজগুলি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তবে, কিছু পরিস্থিতিতে এরা ব্যাকটেরিয়ার বংশরক্ষাতেও সহায়তা করে। ১৯২০এর দশক থেকে ১৯৫০এর দশক পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যাকটেরিওফাজের ব্যবহার নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন। কারণ, এই ভাইরাসগুলি মানব প্যাথোজেন ধ্বংস করতে পারদর্শী। ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণ নিরাময়ে ব্যাকটেরিওফাজের ব্যবহার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফেজ থেরাপি’।
বিজ্ঞানীদের মতে, ‘ফেজ থেরাপি’ কার্যকর ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত। তবে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হওয়ার পরে এই গবেষণার প্রয়োজন ফুরিয়ে আসে। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/জিএস