‘এক-দুই সন্তান নীতি’ প্রত্যাশা ও প্রভাব

চীনের one-child policy (এক সন্তান নীতি) সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই জানি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চীনে ১৯৭৯ সালে এই নীতি চালু হয়। এই নীতি পৃথিবীর বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ চীনকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ‘লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতা’ উপহার দিয়েছে! যার ফলে ২০১৫ সালে সেই নিয়ম ভেঙে দেয় চীনা সরকার।

এই ‘এক সন্তান নীতি’ ৪-২-১ সমস্যারও জনক। ৪-২-১ সমস্যা হচ্ছে- একজন বাচ্চা তার বয়স্ক দুই বাবা-মা (এখানে বাবা-মা এক সন্তান নীতির ফলে উনারা তাদের বাবা মার একমাত্র বাচ্চা) এবং চার গ্র্যান্ড পেরেন্টস (নানা-নানী ও দাদা-দাদী) সবাইকে দেখে রাখার একমাত্র অবলম্বন। যেহেতু তার অন্য কোনো ভাইবোন নেই এই বয়স্ক মানুষদের দেখভাল করতে।

আমাদের দেশে যদিও এ রকম কোনো নীতি নেই, তারপরও সবার মাঝে ছেলেমেয়ে যাইহোক- দুটো বাচ্চা নেয়ার একটি সুপ্ত চাপ বিদ্যমান। যেমন ধরা যাক, চাকুরীজীবী মায়েদের জন্য মাত্র দুইটি মাতৃত্বকালীন ছুটি বরাদ্দ দেয়া। আর বাবাদের তো তাও নেই।

অথচ ছোট বাচ্চা বড় করাতো চাট্টিখানি কথা নয়- তাই উচ্চশিক্ষা শেষে ক্যারিয়ারের চাপ সামলানো ক্লান্ত মায়েদের আর বেশি বাচ্চা নেয়ার এনার্জিও থাকে না।

এতে করে যে সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে নিজের একটা উদাহরণ দেই- পরে সবাই যার যার জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারবেন।

আমার দাদী-নানী কেউই চাকুরী করতেন না এবং খুবই অল্প বয়সে (দাদীর ১২ বছর বয়সে) উনাদের বিয়ে হয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমার মামা, খালা, চাচা থাকলেও কোনো ফুফু নেই। এরপর আসলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। আমার মেয়ের কোনো ফুফু কিংবা খালা নেই।

এবার যদি আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, এই ‘এক-দুই সন্তান নীতি’ প্রত্যাশার জাঁতাকলে আমাদের নাতি-নাতনিদের প্রজন্মের বেশির ভাগের কপালেই মামা কিংবা চাচা কিংবা খালা কিংবা ফুফু না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে, সমাজের বেশির ভাগ মানুষের জন্য এই দশা হওয়া দুঃখজনক।

আমাদের তিন ভাইবোনের নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে বেড়ে উঠার পিছনে আমাদের মামা-খালাদের বিরাট অবদান রয়েছে। যেটা আমাদের বাচ্চাদের পাওয়ার আর সুযোগ নেই।

অভিভাবক বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা বাচ্চার মানসিক বিকাশের জন্য প্রসবকালীন ও পৈতৃক মামা কিংবা চাচা থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।

ছহীহ আবু দাউদের এক হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী “খালা মায়ের মতো একই মর্যাদার।”

বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বব্যাপী পারিবারিক বন্ধনের ভালোবাসার অভাবে তরুণ প্রজন্ম একাকী বেড়ে উঠছে। যার ফলে তারা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর পেছনে আমাদের ‘এক-দুই সন্তান নীতি’ প্রত্যাশার প্রভাব কোনো অংশেই কিন্তু কম নয়।

লেখক: সাঈদা জাহান তানিয়া, গবেষণা সহযোগী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ধান কাটা, ঝড়-বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল, তবে সন্তোষজনক : ওবায়দুল কাদের May 08, 2024
img
২৩ ফুট লম্বা শাড়ির আঁচলে রূপকথার পরী আলিয়া! May 08, 2024
img
সাকিব-সৌম্য-মুস্তাফিজকে নিয়ে বাংলাদেশের দল ঘোষণা May 08, 2024
img
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে: সিইসি May 08, 2024
img
জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট: প্রধানমন্ত্রী May 08, 2024
img
এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে ডলারের দাম উঠল ১১৭ টাকায় May 08, 2024
img
শুধু ইসলাম নয়, সব ধর্মাবলম্বীদের কল্যাণে কাজ করছে সরকার’ May 08, 2024
img
বাংলাদেশে করোনা টিকা চলবে, জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী May 08, 2024
img
হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী May 08, 2024
img
পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি যুবক নিহত May 08, 2024