রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘আর মাত্র দুই এক মাস পরে যে নির্বাচনটি হওয়ার কথা সেটাকে অনেকেই শুধু আরেকটা জাতীয় নির্বাচন হিসেবে না বরং দেখছেন একটি ঝুলে থাকা প্রতিশ্রুতির পরীক্ষা হিসেবে। গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলো তার মূল নৈতিক ভিত্তি ছিল খুবই পরিষ্কার। দলনিরপেক্ষ, স্বার্থনিরপেক্ষ এক প্রশাসন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে। তারপর সসম্মানে সরে দাঁড়াবে।
কিন্তু সময় যত এগোচ্ছে এই প্রতিশ্রুতিটাই যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে সরকারের ভেতরে কিছু কাজকর্মের কারণে।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে জিল্লুর এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসছেন উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। একজন এখনো নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীন।
অন্যজন ঢাকায় ভোট করবেন বলে প্রকাশ্যে জানিয়েছেন এবং তফসিলের আগে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক ঠিকানায় দাঁড়িয়ে তিনি ভোটে নামবেন তা এখনো অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তা সাধারণ কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে নয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী কাঠামোর অংশ হয়ে থাকা দুজন নীতি নির্ধারককে ঘিরে। ফলে প্রশ্নটা ব্যক্তিকে ছাপিয়ে পুরো ব্যবস্থার দিকে চলে গেছে।’
জিল্লুর বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা জানি তত্ত্বাবধায়ক বা নন পার্টি কেয়ারটেকার ব্যবস্থার মূল দর্শনই ছিল— নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রের ক্ষমতা যেন কোনো দল বা ব্যক্তির নির্বাচনী স্বার্থে ব্যবহার না হয়। ১৯৯৬ সালের ১৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থাটা চালু হয়েছিল সেটা মূলত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার ধারণাকে সাংবিধানিক রূপ দিয়েছিল। পরে এই ব্যবস্থা বাতিল হয়ে একের পর এক পক্ষপাত দুষ্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমরা দেখেছি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সেই ব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন। যদিও তা আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না।’
জিল্লুর আরো বলেন, ‘ইতিহাস প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা একটা মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্ন যেটা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার একটা অঘোষিত কেয়ারটেকার সরকারের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব নীতিমালা ও গাইডলাইন দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মান যাচাই করা হয় সেখানে কয়েকটা বিষয় বারবার উঠে আসে। নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিরপেক্ষ, দল নিরপেক্ষ ও স্বার্থনিরপেক্ষ হতে হবে। সরকারি পদে থেকে কেউ যেন নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে রাষ্ট্রের সম্পদ ও ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারে। আর যেকোনো সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত আগে থেকেই চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করতে হবে।’
ইএ/এসএন