এক সময় রান্না, খাওয়াসহ অন্যান্য কাজে মাটির পাত্রই ছিল একমাত্র ভরসা। বাংলাদেশের রান্নাঘরগুলিতে মাটির পাত্র ছিল সব থেকে দরকারি জিনিস। পানি ধরে রাখা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই মাটির পাত্রের ব্যবহার ছিল একচেটিয়া।
এখন সময় বদলে গেছে, মাটির পাত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে সিরামিক, সিলভার বা টিনের পাত্র। বর্তমান সময়ে অভিনব ও ব্যয়বহুল রান্নার পাত্রগুলি সহজলভ্য থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু কারণে মাটির পাত্র ব্যবহারের উপযোগিতা অদ্বিতীয়।
বর্তমানে আমরা যেসব পোড়ামাটির সেটগুলি দেখি তার বেশিরভাগ শোপিস হিসাবে সাজিয়ে রাখা হয়। তবে, রান্নাঘরে আগের মতো সেভাবে মাটির পাত্রের ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না।
যাইহোক, মাটির পাত্রে রান্না করা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, কারণ এতে ধীরে ধীরে খাবার সেদ্ধ হয়। এনভাইরোমেন্টাল সাইন্স ইউরোপ জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, মাটির পাত্র ব্যবহার করা অ্যালুমিনিয়ামের থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ ধাতব পাত্রে রান্না করা হলে খাবার ধাতু মিশ্রিত হয়ে যাবার মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
আপনি যদি কয়েক বছর ব্যবহারের পরে রান্নায় ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম পাত্রের ওজন পরীক্ষা করেন তাহলে দেখতে পাবেন কেনার সময় এর যা ওজন ছিল তা কিছুটা কমে গেছে।
ব্যাঙ্গালোরের ফোর্টিস হাসপাতালের চিফ ডায়েটিশিয়ান রিঙ্কি কুমারীর মতে, “মাটির পাত্রে রান্না করা খাবারে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা মানবদেহের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটির হাঁড়িতে রান্না করা একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং এর মধ্য দিয়ে খাবারের প্রাকৃতিক তেল এবং আর্দ্রতা বজায় থাকে ফলে ভোজ্য তেলের ব্যবহার কমে যায়।”
আসুন জেনে নিই, মাটির পাত্রে রান্না করার সুবিধা সমূহ-
খাবারের পুষ্টিকর মান বজায় রাখে
কাদামাটির হাঁড়িতে ধীরে ধীরে রান্না হওয়ার ফলে আর্দ্রতা ও তাপ খাবারের মধ্যে পরিমিতভাবে সঞ্চালিত হয়, ফলে পুষ্টির স্তর বজায় থাকে। ধাতব পাত্রে, এটি হারিয়ে যেতে পারে।
পিএইচ স্তরকে নিরপেক্ষ করে
মাটির পাত্র কিছুটা ক্ষারীয় প্রকৃতির, এটি খাবারের অম্লতার সঙ্গে যোগস্থাপন করে, তাই পিএইচ ভারসাম্যকে নিরপেক্ষ করে। এটি খাবারকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
তেলের ব্যবহার কমিয়ে দেয়
যেহেতু মাটির পাত্র কিছুটা তাপ-প্রতিরোধী এবং খাবারটি আস্তে আস্তে রান্না করে, তাই আপনি রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার কমাতে পারেন। মাটির পাত্র খাবারের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে। ফলে খাবারের স্বাদ বাড়াতে অপ্রয়োজনীয় ভোজ্য তেল ব্যবহার করতে হয় না।
খাবারকে পুষ্টিকর করে তোলে
কাদামাটির হাঁড়িতে রান্না করলে খাবারে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানযুক্ত হয়, যা আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারী।
খাবারে সুগন্ধ যোগ করে
মাটির পাত্রে রান্না করার পরে আপনার খাবারে যে সুবাস থাকবে তা আপনি অন্য কোনো পাত্রের রান্না থেকে পাবেন না।
অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক
মাটির পাত্র দামেও সাশ্রয়ী। তাছাড়া, কাদামাটির হাঁড়িতে রান্নার রীতিটি মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে, মৃত শিল্পীরাও দুর্দশার সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছে। একটি কিনে আপনি পরোক্ষভাবে মৃত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোনো পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
টাইমস/এনজে/জিএস