লাতিন আমেরিকায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা অ্যাডমিরাল অ্যালভিন হোলসি দুই বছর আগেই অবসরে যাচ্ছেন। ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে শুক্রবার। এই উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে বুধবার ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ এবং মাদক পাচারের সন্দেহে ২০টির বেশি নৌকায় প্রাণঘাতী হামলা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রয়টার্সকে তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং ঘটনা সম্পর্কে অবগত দুজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, হোলসিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন প্রতিরক্ষা দফতরের প্রধান পিট হেগসেথ। দুই কর্মকর্তা বলেন, হেগসেথ অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক পরিকল্পনা ও অভিযান জোরদার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সাউদার্ন কমান্ডের কার্যক্রমে তিনি হতাশ ছিলেন। একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, হোলসিকে বরখাস্ত করা হবে কি না, এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় তার পদত্যাগ ঘোষণার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে।
হোলসি প্রকাশ্যে তার আগাম অবসরের কারণ জানাননি। কিছু কর্মকর্তা ধারণা করছেন, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাদক সন্দেহভাজন নৌকায় সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তবে মঙ্গলবার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে হোলসি বলেছেন, তার সিদ্ধান্ত কমান্ড এরিয়ায় চলমান সামরিক অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ তথ্য পলিটিকো-তে প্রকাশিত রিপাবলিকান এমপি মাইক রজার্সের মন্তব্য থেকে জানা গেছে।
শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন হোলসি। সাময়িকভাবে দায়িত্ব নেবেন তার ডেপুটি বিমানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইভান পেটাস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। ঘটনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোলসির স্থায়ী উত্তরসূরি হিসেবে স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ডের ভাইস কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফ্রাঙ্ক ডোনোভানকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছেন, যদিও সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
হোলসির আগাম অবসর বিরল হলেও নতুন নয়। ২০০৮ সালে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ফ্যালন দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় ইরান সংক্রান্ত মন্তব্যে বুশ প্রশাসনকে বিরক্ত করায় অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। হেগসেথ পেন্টাগনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা পদ ছেড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান সি. কিউ. ব্রাউন এবং প্রথম নারী নৌপ্রধান লিসা ফ্রানচেটি। হোলসির বিদায়ের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি কৌশল নথিতে উনিশ শতকের মনরো মতবাদ পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়েছে, যাতে পুরো পশ্চিম গোলার্ধকে ওয়াশিংটনের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দেখা হয়।
সম্প্রতি ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। রাশিয়া ও চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাদুরোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের অভিযোগ, তিনি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মার্কিন সামরিক উপস্থিতি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও ভেনেজুয়েলার তেলসম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে বাড়ানো হচ্ছে।
বুধবার মার্কিন কোস্ট গার্ড ভেনেজুয়েলার তেলবাহী একটি ট্যাংকার জব্দ করেছে, যা ২০১৯ সাল থেকে চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রথম এ ধরনের অভিযান। বৃহস্পতিবার রয়টার্স জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র আরও ভেনেজুয়েলান তেলবাহী জাহাজ আটকের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ক্যারিবিয়ানে মাদক পাচারবিরোধী অভিযানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো বিতর্কের মুখে পড়েছে। ২ সেপ্টেম্বর সন্দেহভাজন একটি নৌকার ওপর দ্বিতীয় হামলার সিদ্ধান্ত বিশেষ নজর কাড়ে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের ল অব ওয়ার ম্যানুয়াল অনুযায়ী, যুদ্ধক্ষমতাহীন, অচেতন বা জাহাজডুবিতে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির ওপর হামলা নিষিদ্ধ, এমনকি তারা লড়াই থেকে বিরত থাকলে বা পালানোর চেষ্টা না করলে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে গুলি চালানো ‘স্পষ্টত অবৈধ’ আদেশ হিসেবে গণ্য হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন এসব হামলাকে মাদকচক্রবিরোধী যুদ্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাঠিয়ে মার্কিনিদের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
ইউটি/টিকে