কলকাতার সল্টলেক যুবভারতী স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে তৈরি হওয়া নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার জেরে পদত্যাগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজ্যটির ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
চিঠিতে অরূপ বিশ্বাস লিখেন, ‘নিরপেক্ষ তদন্তের মর্মে আমি ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে আপনার কাছে অব্যাহতি চাইছি।’ ওই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, গত ১৩ ডিসেম্বর লিওনেল মেসির যুবভারতীতে আগমনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্ত চান বলেই তিনি অব্যাহতি চাইছেন।
মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে দলটির মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন অরূপ। মুখ্যমন্ত্রী সেই পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন। এ সময় কুণাল ঘোষ অরূপের ইস্তফাপত্র প্রকাশ্যে আনেন। চিঠিটির উপরে ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখ উল্লেখ রয়েছে। তবে, চিঠিতে অরূপ বিশ্বাসের স্বাক্ষর নেই। তবে টালিগঞ্জের অরূপ-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার দাবি, চিঠির হাতের লেখা মন্ত্রীরই।
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী আগেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। নজিরবিহীনভাবে দু’টি তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে একটি পুলিশি তদন্ত কমিটি, অন্যটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি। ডিজিকেও শোকজ করা হয়েছে। তদন্ত যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে হয়, সেই কারণেই ক্রীড়ামন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা চেয়েছেন অরূপ বিশ্বাস।’
এদিকে দলীয়ভাবে ঘোষণা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সচিবালয় নবান্নের তরফ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়নি। অরূপ বিশ্বাস বর্তমানে ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দপ্তরের পাশাপাশি রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের মন্ত্রী। তবে তার ইস্তফা কেবলমাত্র ক্রীড়া দপ্তর থেকেই। ফলে মন্ত্রিসভায় তিনি থাকছেন এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের দায়িত্ব আগের মতোই বহাল থাকবে।
যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলার পরই মেসি ও দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মমতা। ওইদিনই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে সেই কমিটি অতি তৎপরতার সঙ্গে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। যুবভারতীতে ভাঙচুরের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে একগুচ্ছ শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে রাজ্য। তদন্ত কমিটির সুপারিশ মেনে সিট গঠন করা হয়েছে।
শোকজ করা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে। সেই সঙ্গে শোকজ করা হয়েছে বিধাননগরের কমিশনার মুকেশ কুমার, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব রাজেশ কুমার সিনহাকে। সাসপেন্ড করা হয়েছে বিধানগরের ডিসি অনীশ সরকারকে এবং বরখাস্ত করা হয়েছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সিইও দেবকুমার নন্দনকেও।
শনিবার ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে কেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তার জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে তাঁদের। পাশাপাশি, বিধাননগর পুলিশের ডিসি অনীশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত যত দিন চলবে, তত দিন নিলম্বিত (সাসপেন্ড) থাকবেন তিনি। ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ কুমার সিংহকেও শো কজ় করা হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের দফতরের তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে এই নির্দেশ জানানো হয়েছে।
এসএন