রাজনীতি না বদলালে জনগণের ভাগ্য বদলাবে না: মাহমুদুর রহমান মান্না

রাজনীতির মৌলিক ধারা পরিবর্তন ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান ও ভাগ্যের কোনো টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বা আংশিক সংস্কার নয়, জনগণের বাস্তব চাহিদাকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে রূপান্তর করতে না পারলে জনগণের দুর্ভোগ একই জায়গায় থেকে যাবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এই সমাবেশে লিবিয়ার জাওয়াইয়া ও ত্রিপলির কারাগারে বন্দি ২৬ জন বাংলাদেশির মুক্তি এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রবাসীদের নিয়ে রাষ্ট্রের আন্তরিকতার বড় অভাব রয়েছে। শুধু এই সরকার নয়, অতীতের কোনো সরকারই মানবপাচার ও অনিরাপদ অভিবাসনকে মানবিক দৃষ্টিতে সমাধানের চেষ্টা করেনি।

লিবিয়ায় বন্দি বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগেও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা আটক হয়েছেন, কিন্তু কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ বা ‘ম্যাজিক্যাল সমাধান’ দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মান থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব, এমন আশ্বাস বহুবার শোনা গেলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে এই ধরনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া দেশ বর্তমান সংকট থেকে বের হতে পারবে না। যদিও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা অনেকটাই কমে গেছে, তবু নির্বাচনই একমাত্র পথ। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করতে পারে না। প্রশাসন, পুলিশ ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশ ছাড়া কার্যত কাজ করেন না এটাই বাস্তবতা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তখন নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবে প্রশাসনের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

ভোটকে পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, যেমনভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া যায়, তেমনি সচেতন ভোটের মাধ্যমেও একটি গুণগত ও জনবান্ধব সরকার গঠন সম্ভব। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, একটি মাত্র ইস্যুতে আবেগী হয়ে ভোট দেওয়ার প্রবণতা ক্ষতিকর। অতীতের কর্মকাণ্ড, বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সবকিছু বিচার করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণের প্রয়োজন ও চাওয়াগুলো জানা সত্ত্বেও সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রূপান্তর করার দায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব আজও নিতে পারেনি। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, এই কথা বারবার বলা হলেও বাস্তবে জনগণের সেই শক্তিকে পরিবর্তনের পথে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, জনগণের বড় একটি অংশ এখনো জানে না কোন ধরনের নেতৃত্ব বা সরকার তাদের জীবনমান বদলাতে পারে, অথচ সেই জনগণের নামেই রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যারা রাজনৈতিক লড়াইয়ে আছেন, তারা চাইলে এই লড়াই আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে পারেন। তবে সেই লড়াই হতে হবে বাস্তবসম্মত ও ধারাবাহিক। বর্তমান সরকারের সময়েও জনগণের অধিকার আদায়ে সুসংগঠিত ক্যাম্পেইন জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক পরিবার এমন সংকটে আছে, যাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ বিদেশে নিখোঁজ বা কারাগারে বন্দি। তাদের কাছে আন্দোলন সংগঠনের কথা বলা কঠিন।

গ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মান্না বলেন, গ্রামে গেলে মানুষ দলীয় বিরোধের গল্প শুনতে চায় না। তারা জানতে চায়, কেন তাদের এলাকার হাট বন্ধ হয়ে গেল, আবার তা চালু হবে কি না; রাস্তা না থাকায় কেন কৃষিপণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং কেন তারা লোকসানের মুখে পড়ছে। মানুষ তাদের প্রয়োজনের কথা বলতে জানে, কিন্তু সেই কথাগুলোকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে রূপান্তর করার মতো বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব তারা খুঁজে পায় না।

তিনি বলেন, এতদিন যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, তা মূলত আইনশৃঙ্খলাকেন্দ্রিক। কিন্তু জনগণের ভাগ্য বদলের জন্য যে কাঠামোগত ও রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রয়োজন, সেই কাজ এখনো শুরু হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সাধারণ মানুষ যত সচেতন হবে, তত রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও পরিবর্তিত হতে বাধ্য করবে জনগণ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীদের ডাক-এর প্রধান সমন্বয়ক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা। অনুষ্ঠানে লিবিয়ার বিভিন্ন কারাগারে বন্দি বাংলাদেশিদের স্বজন এবং মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তৃণা-ইন্দ্রজিতের সিরিয়ালকে পিছনে ফেলে প্রথমস্থানে ‘পরিণীতা’ Dec 18, 2025
img
নীতীশ কুমারের ক্ষমা চাওয়া উচিত', হিজাবকাণ্ডে গর্জে উঠলেন জাভেদ আখতার Dec 18, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম ১৭ দিনেই রেমিট্যান্স ছাড়াল ২ বিলিয়ন ডলার Dec 18, 2025
img
জান্নাতারা রুমীর মৃত্যুতে এনসিপির শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
এনসিপি ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের ওপর বিভিন্নভাবে হুমকি আসছে: সামান্তা Dec 18, 2025
img
আইনি জটিলতার মাঝেই নতুন রেস্তরাঁ খুলছেন শিল্পা শেঠি Dec 18, 2025
img
এআই সঙ্গীকে বিয়ে করলেন জাপানি তরুণী Dec 18, 2025
img
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ১ জনের, হাসপাতালে ভর্তি আরও ২৪০ Dec 18, 2025
img
রাজধানীর হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণ Dec 18, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ২৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে এক ফ্রেমে মৌসুমী-শাবনূর! Dec 18, 2025
img
তাইওয়ানে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প Dec 18, 2025
img
স্লোগানে নাম ব্যবহারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন লুৎফুজ্জামান বাবর Dec 18, 2025
ফেনীতে গভীর রাতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন Dec 18, 2025
img
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মির্জা ফখরুল Dec 18, 2025
img
হাদির চিকিৎসা তদারকি করতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো পররাষ্ট্র কর্মকর্তাকে Dec 18, 2025
img
রাজনীতি না বদলালে জনগণের ভাগ্য বদলাবে না: মাহমুদুর রহমান মান্না Dec 18, 2025
img
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসছেন তারেক রহমান Dec 18, 2025
img
নিজের রাগের কথা অকপটে স্বীকার করলেন সানি দেওল Dec 18, 2025
img
রিশাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও হেরেছে তার দল Dec 18, 2025