ছাদ বাগানে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি

প্রাচীন রূপকথা জুড়ে আছে ড্রাগন নামক ভয়ংকর শক্তিশালী এক প্রাণীর গল্প। রূপকথার বা কোনো কল্পকাহিনীর ড্রাগন নয়, একটা জলজ্যান্ত ফল। হ্যাঁ এখানে কথা বলা হচ্ছে ড্রাগন ফলের। এটি মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল, যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। এই ফল খেতে অনেক সুস্বাদু আর এটি ফল ভিটামিন-সি, মিনারেল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস।

ড্রাগন ফ্রুট গাছ ক্যাকটাস সদৃশ এবং ছোট গোলাকার ফলের ভিতরের অংশ সাধারণত লাল ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের ভিতরের অংশে ছোট ছোট নরম বীজ থাকে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযুক্ত এবং এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চাষেও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। যেকেউ চাইলে বাড়ির ছাদ বাগানে বড় টবে বা ড্রামে ড্রাগন ফল চাষ করে শখ পূরণ ও পুষ্টি আহরণ দুটোই করতে পারেন।

কখন ড্রাগন ফল চাষের উত্তম সময়
ড্রাগন ফল সাধারণত সারা বছরেই চাষ করা যায়। এটি মোটামুটি শক্ত প্রজাতির গাছ হওয়ায় প্রায় সব ঋতুতেই চারা রোপণ করতে পারেন। তবে ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করে ভালো ফলন পেতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপণ করলে আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন।

ছাদে চাষের উপযোগী পাত্র
আপনার ছাদ বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন মাটির টবে বা ড্রামে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি ২০ ইঞ্চি আকারের ড্রাম বেছে নেন। কারণ এই আকারের ড্রামে চারা ভালোভাবে শিকর ছড়াতে পারবে আর তাতে ফলন অনেক ভালো হবে।

কেমন মাটি প্রয়োজন
যদিও প্রায় সব রকমের মাটিতে ড্রাগন ফল সহজেই চাষ করা সম্ভব। কিন্তু ভালো ফলন চাইলে আপনি অবশ্যই উৎকৃষ্ট জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটিই বাছাই করবেন। শুরুতেই আপনাকে বেলে দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর পরিমাণ মত গোবর, ৫০ গ্রাম পটাশ সার এবং ৫০ গ্রাম টিএসপি সার সংগ্রহ করা মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন। সার ও মাটির মিশ্রণে পরিমাণ মত পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন। এখন আপনার বাছাই করা ড্রামে সকল উপকরণ গুলো ১০ থেকে ১২ দিন রেখে দিন। তারপর ড্রামের মাটি ভালো করে খুন্তি দিয়ে ঝুরঝুরে করে আরও ৪ থেকে ৫ দিন রেখে দিন। মাটি কিছুটা শুষ্ক হয়ে উঠলে ভালো জাতের কাটিং চারা ড্রামে বা পাত্রে রোপণ করুন।

সেচ ও পরিচর্যা
ড্রাগন ফল গাছের সঠিক পরিচর্যা না করলে ফলন ভালো হবেনা। যদিও ড্রাগন ফল গাছে তেমন একটা রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়না তবে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য যত্ন নিয়মিত নিতে হয়। চারা লাগানোর পর ড্রাম টি রোদ যুক্ত স্থানে রাখুন। এটি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ বলে চাষে খুব বেশি পানি দিতে হয়না। চারায় পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন যেন গোঁড়ায় পানি না জমে। ড্রামের ভিতরের বাড়তি পানি সহজেই বের করে দেবার জন্য ড্রামের নিচের দিকে ৪ থেকে ৫ টি ছিদ্র করে দিন মাটি ভরাট করার পূর্বেই। ড্রাগন গাছের ডালপালা লতার মত হওয়ার কারণে গাছের হালকা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিবেন এতে করে গাছ সহজেই ঢলে পরবে না।

ড্রাগন ফল সংগ্রহ
ড্রাগন ফলের কাটিং চারা রোপণের ১ বছর থেকে ১৮ মাস বয়সে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ