যুগের পর যুগ ধরে আমাদের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে একটি খাবার। আর সেটি হচ্ছে ডিম। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে জীবনের বিভিন্ন ধাপে শরীরের পুষ্টির চাহিদা বদলায় এবং সেই চাহিদা পূরণে ডিম এক অনন্য ভূমিকা পালন করে।
এই খাবার শুধু সহজলভ্য বা সাশ্রয়ী নয়, বরং পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
নিয়মিত ডিম খাওয়া নারীদের শারীরিক শক্তি, মানসিক স্থিরতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যরক্ষায় ডিমের গুরুত্ব
নারীদের চোখের স্বাস্থ্যরক্ষায় ডিম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। ডিমের কুসুমে থাকা লুটেইন ও জেক্সানথিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের রেটিনায় জমা হয় এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করেন বা পড়াশোনা করেন, তাদের জন্য ডিম চোখের ক্লান্তি কমাতে ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়ক।
নারীদের স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে হরমোনের ভারসাম্য। মাসিক চক্র, উর্বরতা, গর্ভধারণ কিংবা মেনোপজ—সব ক্ষেত্রেই হরমোনের সঠিক কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমে থাকা কোলিন, ভিটামিন বি১২, ফোলেট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে। এর ফলে মাসিক অনিয়ম কমতে পারে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
ভবিষ্যতে মাতৃত্বের পরিকল্পনা করছেন, এমন নারীদের খাদ্যতালিকায় ডিম রাখা বিশেষভাবে উপকারী।
পেশির শক্তি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও ডিমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে ধীরে পেশির ভর হারাতে শুরু করেন। ডিমে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরচর্চা বা দৈনন্দিন পরিশ্রমের পরে দ্রুত পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি ডিমে থাকা ভিটামিন ডি পেশির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীরকে আরো সক্রিয় রাখে।
নারীদের জন্য আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হাড়ের স্বাস্থ্য। বিশেষ করে ৩০ ঊর্ধ্বদের জন্য বেশি উদ্বেগের। ডিমে থাকা ফসফরাস, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডিম খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমতে পারে এবং দীর্ঘদিন হাড় মজবুত রাখে। এটি গর্ভবতী ও বয়স্ক নারীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম ঠিক রাখতে ডিম অত্যন্ত কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের টিফিনে ডিম খেলে সারা দিনে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাদের জন্য ডিম একটি আদর্শ খাবার। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়, ফলে শরীরের চর্বি ধীরে কমতে শুরু করে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিমে থাকা কোলিন স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আধুনিক জীবনে নারীদের একসঙ্গে বহু দায়িত্ব সামলাতে হয়, যার ফলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। নিয়মিত ডিম খাওয়া মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞান সংক্রান্ত ক্ষমতা ভালো রাখতে সহায়তা করে।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও ডিম কার্যকর। এতে থাকা বায়োটিন ও প্রোটিন ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। যারা চুল পড়া বা নিস্তেজ ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের খাদ্যতালিকায় ডিম রাখলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
তাই বলা যায়, ডিম শুধু একটি সাধারণ খাবারই নয়, বরং নারীদের সার্বিক সুস্থতার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পুষ্টির উৎস। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে ডিম খেলে শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখা সম্ভব।
অবশ্যই যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা বা অ্যালার্জি আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডিম খেতে হবে। সচেতন খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে ডিমকে জায়গা দিলে নারীদের জীবন আরো শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে।
এমকে/টিএ