ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির চিরনিদ্রার স্থান নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকাবহ আবহ বিরাজ করছে। তাকে দাফনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাধির পাশেই কবরস্থানের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই কবি নজরুলের সমাধির সামনে হাদির নির্ধারিত কবরস্থান একনজর দেখার জন্য উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদি শুধু একজন জুলাই যোদ্ধা নন, তিনি আমাদের প্রজন্মের সাহস ও প্রতিবাদের প্রতীক। তিনি বিদ্রোহী, তার লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাফন হবে। যুগে যুগে মানুষ তাকে স্মরণ করবে এবং অনুপ্রাণিত হবে। এই জায়গা আমাদের জন্য সাহস, আবেগ ও স্মৃতির অংশ হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, শনিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে শরিফ ওসমান হাদির ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে তার মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
এর আগে, আজ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তার মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। এ সময় হাদির স্বজন, সহযোদ্ধা ও সহকর্মীরা সঙ্গে ছিলেন।
জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে হাদিকে শেষ গোসল করানো হবে। বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ নেওয়া হবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে দুপুর দুইটায় হাদির নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
জানাজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকছে।
শরিফ ওসমান হাদি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। তিনি ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
এরপর পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সবশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় ওসমান হাদিকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। পরে শুক্রবার তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়।
আজ বাদ জোহর জানাজা শেষে তাকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে সমাহিত করা হবে।
টিজে/টিএ