১১ দিনের মধ্যে অ্যাশেজে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে ইংল্যান্ডের। অ্যাডিলেড টেস্টে অজিদের কাছে ৮২ রানে হেরেছে ইংলিশরা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া, ম্যাচ জেতার সাথে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করে ফেলেছে অজিরা। লজ্জাজনক পরাজয়ে হতাশার তলানিতে নেমেছে ইংলিশ শিবির।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বশেষ ২০২১ সালের অ্যাশেজে ৪-০ ব্যবধানে হেরেছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের মাটিতে ফিরতি অ্যাশেজ ২০২৩ সালে, সেখানে আবার ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ড্র করে ২-২ ব্যবধানে। বৃষ্টি এসে বাগড়া না দিলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর ৩-২ ব্যবধানে জেতার বিরল রেকর্ড গড়ার সুযোগও ছিল। ২০২১ সালের অ্যাশেজে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরই টেস্টে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক করা হয় বেন স্টোকসকে, প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে।
স্টোকস-ম্যাককালাম জুটির অধীনে বাজবল ক্রিকেটের নীতিতে এগিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রথম ১২ টেস্টের মধ্যে জিতেছে ১০ টেস্টেই। খেলার ধরন, মানসিকতা অনেকটাই বদলে ফেলে ইংলিশরা। আগ্রাসী ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের মেজাজেই খেলতে থাকে সাদা পোশাকের টেস্ট ফরম্যাট। শুরুর দিকে এমন নীতিতে বেশ সাফল্য এলেও ধীরে ধীরে কিছুটা কমেছে সাফল্য। হানিমুন পিরিয়ড পার করার পর যেন কিছুটা মুখ থুবড়েই পড়েছে বাজবল। যে কারণে এবারের অ্যাশেজেও কিছু ম্যাচে বাজবল থেকে বেরিয়ে ধ্রুপদী টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে ইংল্যান্ড।
তবে শেষ রক্ষা মেলেনি। ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ১১ দিনের মধ্যে অ্যাশেজ হেরেছে ইংলিশরা। খেলা শেষে নিজের হতাশা লুকাননি ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তবে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
ম্যাচের পর স্টোকস বলেছেন, ‘যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা এখানে এসেছিলাম, তা এখন শেষ। অবশ্যই এটা চরম হতাশার। সবার হৃদয় পুড়ছে এবং সবাই কষ্ট পাচ্ছে। আরও দুটি ম্যাচ বাকি আছে এবং মনোযোগ এখন সেদিকে। একটি লক্ষ্য মাথায় রেখেই আমরা এখানে এসেছিলাম এবং সেটি অর্জন করতে পারিনি। খারাপ লাগছে, জঘন্য। তবে আমরা এখানেই থামছি না।
অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন কিনা এমন প্রসঙ্গে স্টোকসের জবাব, ‘একদম।’
অজিদের এমন দাপটের সামনে ইংল্যান্ডের ভেঙে পড়ার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেন স্টোকস বলেছেন, ‘পরিকল্পনার টানা বাস্তবায়নেই পার্থক্য। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে আমাদের চেয়ে অনেক ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট খেলাটি নির্ভর করে এসবের ওপরই এবং অস্ট্রেলিয়া এখানে আমাদেরকে পর্যদুস্ত করেছে অনেক উঁচু পর্যায়ে। আগের ম্যাচগুলোয় ও এই সপ্তাহে আমরা কিছু কিছু পর্যায়ে তা পেরেছি, কিন্তু ধারাবাহিক হতে পারিনি।’
২০২২ সালে টেস্ট অধিনায়কত্ব পান বেন স্টোকস। এই সফরের আগেই জানিয়েছিলেন, ফল যা-ই হোক, অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সিরিজ হারের পরেও তাই স্টোকসের কণ্ঠে ঘুরে দাঁড়ানোর বিশ্বাস। ২০২২ সালে টেস্ট অধিনায়কত্ব পান বেন স্টোকস। এই সফরের আগেই জানিয়েছিলেন, ফল যা-ই হোক, অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সিরিজ হারের পরেও তাই স্টোকসের কণ্ঠে ঘুরে দাঁড়ানোর বিশ্বাস। বেন স্টোকস বলেছেন, ‘যদিও ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনি, তবে এই ম্যাচ থেকে অনেক কিছু আমরা পরের দুই ম্যাচে বয়ে নিতে পারি। দল হিসেবে নিজেদের নিয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি আমরা। যথেষ্ট ধারাবাহিক ও বিরামহীন আমরা হতে পারিনি। অস্ট্রেলিয়ায় এসে ওদের সঙ্ড়ে লড়তে যতটা ভালো হওয়া উচিত, আমরা এর ধারেকাছে ছিলাম না। স্কোর লাইনেই তা ফুটে উঠছে।’
বাকি দুই ম্যাচে লড়াই চালিয়ে যেতে চান স্টোকস, ‘তবে আরও দুটি ম্যাচ আছে। অনেক কিছু এখনও বাকি আছে। আমরা ভেঙে পড়ব না বা স্রেফ সিরিজ শেষ করার জন্য বা খেলার জন্য খেলব না। মাঠে সবকিছুই উজাড় করে দেব আমরা। অনেকেই দেশ থেকে খেলা দেখতে এসেছে, শেষ দুই ম্যাচেও থাকবে। তাদের জন্য সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব আমরা।’
মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ বক্সিং ডে টেস্ট, মাঠে গড়াবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।