দীর্ঘদিন ধরেই নানা ইস্যুতে সোচ্চার গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জুলাই অভ্যুত্থানেও তিনি ছিলেন মাঠে। স্লোগান দিয়েছেন ফ্যাসিস্টবিরোধী।
সেই গীতিকবি এবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তারেক রহমান দেশে ফেরায় দীর্ঘ একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টটিকে তারেক রহমানের উদ্দেশে খোলা চিঠিও বলা যায়। যেখানে উঠে এসেছে তার কৈশর-তারুণ্যে রাজনৈতিক প্রেম, ছেলেবেলার আইডল আর পরবর্তী জীবনের ভাবনার কথা।
তিনি লিখেছেন,
'ওয়েলকাম হোম - প্রিয় তারেক রহমান।
আপনি আমাকে চিনবেন না।
আমি হলাম সেই কিশোর, যে আপনার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে স্কুল থেকে খাল কাটতে গিয়েছিলো নাটোরের উপজেলা সিংড়ার চলন বিলে। সেই কিশোর কালে শুধুমাত্র দেশের জন্য গায়ে কাদামাটি মেখে দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়েছিলাম। পাসপোর্ট বা ভোটার আইডি দিয়ে নয়, সেই খাল কাটার কোদালের প্রতিটি কোপ আর মাথায় করে মাটি বহনের ভিতর দিয়েই তৈরি হয়েছিল আমার আইডেন্টিটি ।তৈরি হয়েছিল এই ভূমির ভূমিপুত্র একজন কবি লতিফুল ইসলাম শিবলী। সেই থেকে আপনার বাবা আমার হিরো। এখনো আমার সানগ্লাসটা তার মতোই- রেবন।'
শিবলী লিখেছেন, 'আমার তারুণ্যের সোনালী সময় পুরোটাই কেটেছে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে । সেই আন্দোলনে আপনার মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন আমার নেত্রী । সেই ৯০ দশকে এক তরুণ ছাত্রনেতা যে তার লেখা বিখ্যাত গানটি সেই সময়েই লিখে ফেলেছিল নাটোর শহরের দেয়ালে দেয়ালে- 'জেল থেকে বলছি'। সেই তরুণ ছাত্রনেতা অনেকগুলো মিথ্যে মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে এসেছিল ঢাকায়।
ঢাকায় এসে সেই তরুণ ক্ষমতার রাজনীতিতে না জড়িয়ে, জড়িয়ে ছিল সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে- লেখায়, কবিতায়, গানে, সুরে, অভিনয়, মডেলিংয়ে । একজন গীতিকবি হিসেবে ব্যান্ড সংগীতের ভেতর দিয়ে ঘটিয়েছিল বাংলা গানের জয়জয়কার।'
শিবলী আরও লেখেন, 'এরপরের ইতিহাস অন্ধকার আওয়ামী ফ্যাসিবাদের। হাসিনার গুম খুন মামলার ভয় উপেক্ষা করে অনর্গল লিখে গেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে । দেশের ভিতর থেকেই প্রাণপণে লড়েছি ভারতের সেবা দাসী হাসিনার বিরুদ্ধে। শুধু লেখায় সীমাবদ্ধ থাকিনি, স্বশরীরে রাজপথে থেকেই লড়াই করেছি। পাঁচই আগস্ট জীবন বাজি রেখে শহীদ হাদী চত্বর (শাহবাগ চত্বর) দখল করা প্রথম দলটির একজন ছিলাম আমি। আমি সেই সৌভাগ্যবান বেঁচে থাকা মানুষ, যার ঝুড়িতে আছে ৯০‘ ও ২৪‘ এর মত ২টি গৌরবজনক সফল বিপ্লব।'
এই গীতিকবি লিখেছেন,' প্রিয় তারেক রহমান,
এদেশের মানুষ আপনাকে আজ যে অবিস্মরণীয় ভালবাসা ও সম্মানে সিক্ত করেছে এটা দেশের জন্য আপনার পিতা-মাতা আপনার তথা আপনার পরিবারের আত্মত্যাগের বিনিময়। দেশের এই ক্রান্তিকাল ও যুগসন্ধিক্ষণে আপনাকে স্বাগতম।
আর আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই -
আপনার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পেছনে রয়েছে অনেক প্রাণের আত্মত্যাগ। আপনি দেশে ফিরলেন জুলাই বিপ্লবের ২০০০ শহীদের রক্তাক্ত পথ মাড়িয়ে, ত্রিশ হাজার আহতদের আর্তনাদের ভেতর দিয়ে আর অসংখ্য বাবা মা ভাই বোনের দীর্ঘশ্বাসের বিষাদী স্পর্শ গায়ে মেখে। মহান আল্লাহ চাইলে আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব যদি আপনার হাতে যায়, তবে আপনি এই অধ্যায়টুকু কোনোভাবেই ভুলে যাবেন না। আমরা অপেক্ষা করছি আপনার মধ্যে আপনার পিতা-মাতার সৎ সাহসী ও আপোষহীন নেতৃত্বের প্রকাশ দেখার জন্য।'
তিনি বলেছেন, 'আপনাকে আরও জানিয়ে দিতে চাই-
যতক্ষণ আপনি ইনসাফের উপর কায়েম থাকবেন ততক্ষণ আমার কলম, আমার উচ্চারণ, আমার রক্ত, আমার ঘাম, আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু যদি আপনি ইনসাফের উপর কায়েম না থাকেন তবে আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম হাসিনার বিরুদ্ধে ।
আমি ইনসাফের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। সে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, যে ইনসাফ করবে আমি তার দলে। এছাড়া আমার আর কোন দল নাই। এটাই আমার কবিতার উচ্চারণ- 'যতক্ষণ তুমি ইনসাফের পক্ষে ততক্ষণই তুমি মানুষ'।
আর আপনাকে আরও জানিয়ে দিতে চাই-
এই দেশের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন আপনার বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই একই গতিপথের দিকনির্দেশনা প্রতিধ্বনি তুলেছে গত ২০ ডিসেম্বর শহীদ ওসমান হাদির জানাজায়। তার কফিনের সামনের কাতারে শামিল ছিল চিফ এডভাইজার সহ দেশের সমস্ত নেতৃবৃন্দ। আর তাদের পেছনে প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে ছিল প্রায় ১৫ লক্ষ জনতা । সেই জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হয়েছিল-
দিল্লি না ঢাকা ?
আসমান জমিন প্রকম্পিত করে জনতা তথা বাংলাদেশ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল-
ঢাকা ঢাকা।
তারপর প্রশ্ন করা হয়েছিল-
গোলামী না আজাদী ?
১৫ লক্ষ কন্ঠ জানিয়ে দিয়েছিল উত্তর-
আজাদী আজাদী ।
এরপর প্রশ্ন করা হয়েছিল-
আপস না সংগ্রাম ?
জনতা উত্তর দিয়েছিল-সংগ্রাম সংগ্রাম ।
তারপর দেয়া হয়েছিল সেই মহিমান্বিত সাক্ষ্য-
নারায়ে তাকবীর-
আধিপত্যবাদীদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে উত্তর দেওয়া হয়েছিল- আল্লাহু আকবার।
প্রিয় তারেক রহমান ।
এটাই বাংলাদেশের গতিপথ। আমার মত শহীদ ওসমান হাদিও আপনার বাবাকে ভালোবাসতেন আর আপনি এই গতিপথের সারথী হলে ২০ কোটি মানুষ আপনার সঙ্গে থাকবে।
আপনার জন্য আমার অন্তরের গভীর থেকে দোয়া। মহান আল্লাহ- সৎ নেতৃত্ব আর ইনসাফের উপর কায়েম থাকতে আপনার সহায় হোন।'
আরআই/এসএন