দুই সন্তানের পৃথিবীকে ঘিরেই এখন কোয়েল মল্লিকের দিনযাপন। কবীর আর কাব্যর হাত ধরে সংসারের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি যতই পরিপাটি গৃহিণী হয়ে উঠুন, তবু মা-বাবার কাছে আজও তিনি সেই আদুরে মেয়েটিই। মায়ের শাড়ির প্রতি আলাদা টান কোয়েলের। তাই তো নতুন ছবি ‘মিতিন একটি খুনির সন্ধানে’-র প্রচারে মায়ের শাড়ি পরেই ক্যামেরার সামনে ধরা দিলেন তিনি। একদিকে পর্দার মিতিন, অন্যদিকে বাস্তবের কোয়েল দুটো চরিত্রই যেন আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তায় ভরপুর।
বাইশ বছরের অভিনয়জীবনে কোনো বিতর্ক নয়, কোনো বেফাঁস মন্তব্য নয় কোয়েল মল্লিক মানেই পরিমিতিবোধ। নিজের এই সংযমকে তিনি আলাদা করে গড়ে তোলা কোনো অভ্যাস বলে মানতে নারাজ। তাঁর মতে, মানুষের মনে আঘাত লাগে এমন কথা না বলাটাই তাঁর স্বভাব। রাগের মুহূর্তেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তিনি। চিৎকার নয়, কটু বাক্য নয় প্রয়োজনে শুধু একটু কঠোর কণ্ঠ।
মিতিন চরিত্রটি কোয়েলের কাছে শুধু একটি গোয়েন্দা চরিত্র নয়, বরং এক আত্মনির্ভর নারীর প্রতিচ্ছবি। সংসার সামলে, নিজের দায়িত্ব পালন করেও যে একজন নারী দৃঢ়ভাবে নিজের পেশায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, মিতিন তারই উদাহরণ। কোয়েল নিজেও মনে করেন, মানুষ চিনতে পারার ক্ষমতা তাঁর আছে, আর সেই কারণেই এই চরিত্রটি তাঁকে বারবার টানে।
কেরিয়ার আর সংসারের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে কোয়েল মানতে চান না। তাঁর কাছে অভিনয় যেমন জীবনের অংশ, তেমনই সন্তানদের মানুষ করা, বয়সী মা-বাবার দেখভাল করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কোনো দিকেই তিনি ফাঁকি দিতে রাজি নন। বাড়িতে থাকলে সন্তানদের জন্যই তাঁর পুরো সময়, তখন মোবাইল বা টেলিভিশন দূরে সরিয়ে রাখেন।
নিজের জন্য আলাদা সময় এই ধারণাটাকেই তিনি বিলাসিতা বলে মনে করেন। সন্তানদের সঙ্গে কাটানো সময়ই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় আনন্দ। রাতে তারা ঘুমিয়ে পড়লে বই পড়া, টেলিভিশন দেখা কিংবা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলাই তাঁর নিজের সময়।
সাফল্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারিয়ে ফেলার গল্পেও বিশ্বাসী নন কোয়েল। ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, তারাই আজও পাশে রয়েছেন। বন্ধুর সংখ্যা কম, কিন্তু সম্পর্ক গভীর।
দীর্ঘ অভিনয়জীবন আর সুখী সংসার সব কিছু পরিকল্পনা করে সাজানো নয় বলেই মনে করেন তিনি। প্রথম ছবির পর দ্বিতীয় ছবির নিশ্চয়তাও ছিল না, অথচ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশের বেশি ছবিতে অভিনয় করে একটি প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সঙ্গী হয়েছেন কোয়েল।
বক্স অফিসের প্রতিযোগিতা বা হিসাবনিকাশ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না তিনি। তবে দর্শকের পছন্দ-অপছন্দের দিকে নজর রাখেন। প্রযোজক স্বামী নিসপাল সিং রানার সঙ্গে কাজের সম্পর্কেও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট। পারিশ্রমিক নেওয়া নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। আত্মসম্মান আর আর্থিক স্বাধীনতাকে তিনি জীবনের অত্যন্ত জরুরি বিষয় বলে মনে করেন। নিজের উপার্জনের হিসাব নিজেই রাখেন, আর সব নারীকেই অর্থনৈতিক বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
ওয়েব সিরিজের প্রস্তাব এলেও আপাতত বড়পর্দার আকর্ষণেই ভরসা রাখছেন কোয়েল। তাঁর বিশ্বাস, সময় বদলালেও সিনেমার জাদু আজও আলাদা।
আরপি/এসএন