লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য তার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা চার মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এক আবেগঘন ও আত্মবিশ্লেষণমূলক বার্তা দিয়েছেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তিনি তার ইউটিউবিং যাত্রা, ব্যক্তিগত সংগ্রাম, বিশ্বাসঘাতকতা এবং সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
স্ট্যাটাসে পিনাকী ভট্টাচার্য লেখেন, ইউটিউবিংয়ের শুরুটা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে পারতেন না, নিজের কণ্ঠস্বরও তার কাছে অপরিচিত মনে হতো।
কথা বলতে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলতেন, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ভুলে যেতেন-যা এখনও মাঝে মাঝে ঘটে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি থেমে যাননি। তার ভাষায়, “নিয়তিই যেন হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেত আমাকে।”
দেশ ছাড়ার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। সে সময় এটিকে নিজের জীবনের এক বড় দুর্ভাগ্য মনে হলেও পরে বুঝতে পারেন, সেটিই ছিল এক ‘ঐশী আশীর্বাদ’, যা তখন তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি।
পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, এই পথচলায় তিনি শুধু সমর্থনই পাননি, বরং পেয়েছেন অবিশ্বাস, বিশ্বাসঘাতকতা এবং বন্ধুর মুখোশে শত্রুতার অভিজ্ঞতা। তবুও এসব প্রতিকূলতা তাকে ভেঙে না দিয়ে আরও দৃঢ় করেছে। মানুষের ভালোবাসাকে তিনি ‘অদৃশ্য বর্ম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা তাকে সবসময় রক্ষা করেছে।
চার মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারকে তিনি নিছক একটি সংখ্যা হিসেবে দেখেন না। তার মতে, শুধুমাত্র রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা একটি বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের চার মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার পাওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি একটি রাজনৈতিক জাগরণের প্রতীক। তিনি বলেন, মানুষ এখন জানতে চায়, প্রশ্ন করতে চায় এবং নীরব থাকতে চায় না।
নিজের মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তির কথাও তুলে ধরেন পিনাকী। ঘুমহীন রাত আর ক্লান্ত শরীর নিয়েও তিনি নিয়মিত ক্যামেরার সামনে বসেন, কারণ তিনি মনে করেন-এই সময়কে অতিক্রম করতে তাকে আরও অনেক না বলা কথা বলতে হবে।
স্ট্যাটাসের এক পর্যায়ে তিনি জানান, মাঝে মাঝে সবকিছু থেকে সরে যেতে ইচ্ছা করে। তবে দর্শক ও পাঠকদের ভালোবাসাই তাকে থামতে দেয় না। তাদের চোখেই তিনি নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পান বলে উল্লেখ করেন।
সবশেষে পিনাকী ভট্টাচার্য লেখেন, “আমি জানি না আমি আরও কতদিন ইউটিউবিং করবো। কিন্তু যতদিন এই কণ্ঠ থাকবে, ততদিন সত্য, মানুষ এবং দেশের সম্মানের পক্ষে কথা বলবো।”
নিজেকে বাস্তব জীবনে একজন ইন্ট্রোভার্ট ও নম্র মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে তিনি নত হতে পারেন, কিন্তু অন্যায়, জুলুম ও জনগণের শত্রুর কাছে তিনি আপসহীন। স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি পাঠকদের কাছে দোয়া কামনা করে লেখেন-“ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
টিজে/টিএ