আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ড. ফয়জুল হক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাকে এ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর দলীয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
মনোনয়ন পাওয়ার পর ড. ফয়জুল হক বলেন, দাঁড়িপাল্লার মনোনয়ন পেয়ে তিনি আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক সরকারের ভিত্তি গড়ে উঠবে এ যাত্রার অংশ হতে পেরে তিনি গর্বিত।
নিজের নির্বাচনী অঙ্গীকার সম্পর্কে ড. ফয়জুল হক বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনকে উন্নয়ন, সুশাসন এবং সত্য ও ন্যায়ের রাজনীতির মডেল হিসেবে গড়ে তোলাই তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি জানান, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত প্রশাসন গড়া, যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজাপুর-কাঠালিয়া এলাকার নদীভাঙন রোধ, যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন, রোগী পরিবহনের জন্য জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু, কৃষকদের সরাসরি বাজারসংযোগ নিশ্চিত করা এবং এলাকার স্কুল-কলেজে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই তার নির্বাচনী অঙ্গীকার। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়, আর আমি সেই পরিবর্তনেরই বার্তাবাহক হতে চাই।
তিনি আরও বলেন, তিনি কোনো একক দলের প্রতিনিধি নন সব ধর্ম ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিনিধি হতে চান। প্রচারণার সময় ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের সামনে পড়লে সেখানেও গিয়ে তিনি কুশল বিনিময় করছেন। নির্বাচিত হোন বা না হোন, তিনি সবার প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করে যেতে চান।
ড. ফয়জুল হক জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ পতনের পর ডা. শফিকুর রহমান তাকে মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হবে। একই সঙ্গে তিনি চরমোনাই, ছারছিনা, নেছারাবাদসহ দেশের বিভিন্ন পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে গত ৪ আগস্ট ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপির মালয়েশিয়া শাখার সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বিএনপির সাম্প্রতিক অবস্থান ইসলামপন্থিদের প্রতি নেতিবাচক হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এ কারণেই দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার পর তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ড. ফয়জুল হক ওলিয়ে কামেল হযরত কায়েদ সাহেব হুজুর (রহ.)-এর নাতি। তিনি ১৯৮৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পশ্চিম চাড়াখালী গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ সম্পন্ন করার পর তিনি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৯ সালে পিএইচডি এবং ২০২৩ সালে পোস্ট-ডক্টোরাল ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন।
তিনি বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুজ্জাম্মিলুল হক রাজাপুরী হুজুরের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বড় ভাই অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ছাইফুল হক, মেজ ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহীদুল হক এবং সেজ ভাই আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আমিনুল হক।
গত ১৬ বছর ধরে ড. ফয়জুল হক অনলাইন টকশো, লেখালেখি এবং মাঠপর্যায়ে অন্যায়, জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রবাসে থেকেও জুলাই বিপ্লবের সময় জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তিনি আলোচনায় আসেন।
জেলা জামায়াতের আমির এডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, ড. ফয়জুল হক একজন পরিশীলিত, নীতিবান ও সাহসী মানুষ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার সময়ও আমরা তাকে সমর্থন জানিয়েছি। পরে দলীয় মূল্যায়নে দেখা গেছে, তিনি এ অঞ্চলে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। তাই দলীয়ভাবে তাকে পূর্ণ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি তার নেতৃত্বে এ আসনে ন্যায়ের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শতভাগ আশাবাদী যে এ আসনে আমাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।
এমআর/টিএ