যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আতঙ্কের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল বাঁকুড়া। সুপারস্টার জিৎ-এর অনুষ্ঠানে যে রাত কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, তার ভয়াবহতা এখনও টাটকা প্রশাসনের মনে। ভাঙচুর, লুটপাট, ব্যারিকেড ভেঙে উন্মত্ততা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েছিল পুলিশ। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এবার শ্রীরামপুরে আগাম সতর্কতায় নামল পুলিশ প্রশাসন।
মঙ্গলবার শ্রীরামপুরে ‘জিৎ নাইট’ ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের ঢল নামার আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। বাঁকুড়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য সোমবার রাত থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এলাকায় পরিদর্শনে আসেন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। শিল্পীর নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দর্শকদের চলাচল, সবকিছুই রাখা হয়েছে কড়া নজরে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার ঘটনার পর এবার কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় পুলিশ। তাই অনুষ্ঠান চত্বর ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। অতিরিক্ত নজরদারি, ব্যারিকেড, ভিড় নিয়ন্ত্রণের আলাদা পরিকল্পনা—সব মিলিয়ে শ্রীরামপুরে আঁটসাঁট নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর আগের দিন আরামবাগে অনুষ্ঠান করেছিলেন জিৎ। সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় কোনও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের দাবি, সেই অভিজ্ঞতাকেও মাথায় রেখেই শ্রীরামপুরের প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হয়েছে।
বাঁকুড়ার ঘটনার কথা এখনও ভুলতে পারেননি অনেকেই। বিষ্ণুপুর মেলার যদুভট্ট মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল পরিস্থিতি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমাগম এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে পুলিশ ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, ভাঙচুর। মঞ্চের সামনে থাকা ব্যারিকেড ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শতাধিক চেয়ার। প্রবীণ ও মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট বসার জায়গাও রেহাই পায়নি।
অভিযোগ ওঠে, আশপাশের দোকানেও চালানো হয় ভাঙচুর। টাকাপয়সা লুটের ঘটনাও সামনে আসে। অনুষ্ঠানস্থলের ব্যানার ও ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলা হয়। মেলার পাশেই থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বিশাল ফ্লেক্সও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন একাধিক দর্শক। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও পরে ব্যক্তিগত বন্ডে মুক্তি দেওয়া হয়।
সেই বিভীষিকাময় রাত থেকেই শিক্ষা নিয়ে এবার শ্রীরামপুরে কোনওরকম ঢিলেমি রাখতে নারাজ প্রশাসন। পুলিশের বক্তব্য, বিনোদন উৎসব আনন্দের জন্য, বিশৃঙ্খলার জন্য নয়। তাই সব প্রস্তুতি সেরে রেখেই মাঠে নামা হয়েছে।
এসএন