ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল আমেরিকা। ওই দেশটিতে এ ফলটি প্রবর্তন করা হয় এয়োদশ সেঞ্চুরিতে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে এ ফল প্রথম প্রবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার। সেন্টারের পরিচালক প্র. ড. এম. এ. রহিম এ  ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড থেকে। এখন এ সেন্টার থেকে ফলটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে। কারণ, দেশের মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষের জন্য উপযোগী। 

বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ ( লাল ) খুব ভালো। এছাড়াও হলুদ ও লালচে ড্রাগন ফল চাষাবাদ করা যেতে পারে। দেশের সব হর্টিকালচার সেন্টার ও বড় ধরনের নার্সারিতে ড্রাগন ফলে চারা পাওয়া যাবে। বীজ দিয়ে চারা তৈরি করা গেলেও কাটিং করে শাখা কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা উত্তম।

জমি নির্বাচন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা
সুনিষ্কাশিত উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে এবং ২-৩ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিতে হবে। সমতল ভূমিতে বর্গাকার এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের কাটিং রোপণ করতে হবে। ড্রাগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য অক্টোবর।

চারা রোপণের আগে ১.৫ মিটার x ১.৫ মিটার x ১ মিটার আকারের গর্ত করে তা রোদে খোলা রাখতে হবে। গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ৫০ সেমি দূরত্বে চারটি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে তিন মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য চারটি চারার মাঝে একটি সিমেন্টের চার মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হলে খড়ের বা নারিকেলের রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে, যাতে কাণ্ড বের হলে খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে। প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মোটরসাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকিয়ে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কেননা ঝুলন্তভাবে ফল বেশি ধরে ।

সার প্রয়োগগাছের বয়স ১-৩ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৪০-৫০ কেজি, ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম একসঙ্গে মিশ্রণ করে দিতে হবে। গাছের বয়স ৩-৬ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৫০-৬০ কেজি, ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, এমওপি ৩০০ গ্রাম একসঙ্গে মিশ্রণ করে দিতে হবে। গাছের বয়স ৬-৯ বছরে মধ্যে মাদা প্রতি গোবর সার ৬০-৭০ কেজি, ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম, টিএসপি ৩৫০ গ্রাম, এমওপি ৩৫০ গ্রাম একসঙ্গে মিশ্রণ করে দিতে হবে। গাছের বয়স ১০ বছরের ঊর্ধ্বে  হলে মাদা প্রতি গোবর সার ৭০-৮০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম একসঙ্গে মিশ্রণ করে দিতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা
ড্রাগন ফল খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই শুষ্ক মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।এছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার অর্থাৎ ফুল ফোটা অবস্থায় একবার, ফল মটর দানা অবস্থায় একবার এবং ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা
ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তবে কখনো কখনো এ গাছে মূলপঁচা, কান্ড ও গোঁড়া পঁচা রোগ দেখা যায়। গোঁড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পঁচে যায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভালো। আর ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কাণ্ড ও গোঁড়া পচা রোগ হতে পারে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোনো ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া পোকা মাকড় দমন করতে হবে।

ফল সংগ্রহ
ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপণের পর এক থেকে দেড় বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

 

টাইমস/জিএস 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হ্যাক হল শ্রুতি হাসানের এক্স অ্যাকাউন্ট, ভক্তদের সতর্ক বার্তা Jun 25, 2025
যে আমলে সহজে জান্নাত পাবেন | ইসলামিক জ্ঞান Jun 25, 2025
img
ইরান-ইসরাইল সংঘাত বন্ধে পুতিনের সহায়তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ট্রাম্প Jun 25, 2025
img
সুষ্ঠ ভোট হলে তারা একটা দুইটা আসনও হয়তো পাবে না : রুমিন ফারহানা Jun 25, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে ইরানিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানে আটক ১১ Jun 25, 2025
img
বোলার, ফিল্ডার, লোয়ার অর্ডার, সবার পাশে গম্ভীর Jun 25, 2025
img
ট্রাম্পের মন্তব্যে ন্যাটোর ঐক্য নিয়ে নতুন করে ভাবনা Jun 25, 2025
img
‘প্লিজ! সব বিষয়ে কথা বলবেন না’— শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে গোলাম মাওলা রনি Jun 25, 2025
img
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে চেলসি Jun 25, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ, শুনানি আজ Jun 25, 2025
img
রাজনৈতিক লড়াইয়ে টিকে থাকতে খামেনি সাম্রাজ্যের পতনই ছিলো নেতানিয়াহুর মূল লক্ষ্য! Jun 25, 2025
আর অপেক্ষা নয় সরকারে আসছে এনসিপি! Jun 25, 2025
img
মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়েছে: পেন্টাগন Jun 25, 2025
img
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় উদ্বেগ তুরস্কের, নিন্দা নয় বরং মধ্যস্থতার প্রস্তাব এরদোয়ানের Jun 25, 2025
img
দ্বিতীয় দফার ষষ্ঠ দিনের আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন Jun 25, 2025
img
রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারকে আগ্রহী চীন : বিএনপি Jun 25, 2025
img
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘ধ্বংস’ করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র Jun 25, 2025
img
'ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি' Jun 25, 2025
img
সিরিজের শেষ টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ Jun 25, 2025
img
২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচিতে Jun 25, 2025