মোনোসেক্স গলদা চিংড়ি চাষের কলাকৌশল

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে স্বাদু পানির দ্রুত বর্ধনশীল চিংড়ির মধ্যে গলদা চিংড়ি অতি পরিচিত। কিন্তু দেশের চাষিরা এখনও সনাতন বা উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চাষ করে আসছেন। ফলে চিংড়ি ঘেরের আয়তন বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যের চাপ মোকাবিলা করতে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য উৎপাদন বাড়াতে মনোসেক্স গলদা চিংড়ি চাষ একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। এই পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মনোসেক্স গলদা চিংড়ি চাষ ও গুরুত্ব
মনোসেক্স গলদা চিংড়ি চাষ বলতে আলাদা আলাদাভাবে পুরুষ গলদা বা স্ত্রী গলদা চিংড়ি চাষ বুঝায়। এ পদ্ধতিতে পুরুষ গলদা স্ত্রী গলদা চিংড়ির তুলনায় অতি দ্রুত বাড়ে ও ওজন অনেক বেশি হয়। প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত একটি পুরুষ গলদা চিংড়ির ওজন ৪০০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে স্ত্রী গলদা চিংড়ি ওজনে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। তাও অনেক সময়ের প্রয়োজন। মনোসেক্স পদ্ধতিতে পুরুষ গলদা চিংড়ি চাষের মাধ্যমে যেমন প্রতিটি চিংড়ির একক ওজন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সামগ্রিক উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।

পুরুষ ও স্ত্রী গলদা চেনার উপায়
পূর্ণাঙ্গ গলদা চিংড়ির স্ত্রী-পুরুষ চেনার অনেক উপায় আছে যেমন- স্ত্রী গলদা চিংড়ির চেয়ে পুরুষ গলদা চিংড়ি বেশি বাড়ে। তাই একই বয়সের পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়ির চেয়ে আকারে খানিকটা বড় হয়। শিরোবক্ষ আকারে মোটা ও বড় হয় আর নিম্নোদয় অপেক্ষাকৃত সরু দেখায়। পুরুষ চিংড়ি সহজেই নজরে পড়ে এমন একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দ্বিতীয় ভ্রমণপথ লম্বা, মোটা ও দাঁড়া বিশিষ্ট।

এই দ্বিতীয় বাহুর দ্বারা পুরুষ চিংড়ি স্ত্রী চিংড়িকে সঙ্গমকালে দৃঢভাবে আলিঙ্গনে আবদ্ধ রাখে। এছাড়া স্ত্রী চিংড়ির মাথা ও দ্বিতীয় বাহু অপেক্ষাকৃত অনেকটা ছোট থাকে এবং নিম্নোদয়ের তলার দিকে ডিম ধারণের জন্য নিম্নোদয় অপেক্ষাকৃত চওড়া হয়। পরিপক্ব স্ত্রীর মাথার নীচে ও পার্শ্বে গোলাপি রং/কমলা রং এর আভা দেখা যায়।

চাষের কলাকৌশল
আগেই বলা হয়েছে যে, মনোসেক্স গলদা চিংড়ি চাষ মূলত পুরুষ গলদা বা স্ত্রী গলদা চিংড়ির পৃথক চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্মরণ রাখতে হবে- আমাদের দেশে গলদা চিংড়ি চাষে রেণু হতে কিশোর চিংড়ি (স্থানীয় ভাষায়-পিচ বলে) পর্যায় পর্যন্ত আসতে প্রায় ২ হতে আড়াই মাস বা কখনও কখনও তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। চিংড়ি কিশোর অবস্থায় পৌঁছালে পুরুষ-স্ত্রী আলাদা করা হয়। পরবর্তীতে চিংড়ি বিক্রি করতে আর মাত্র তিন মাস সময় বাকী থাকে। কারণ শীত শুরুর আগে চিংড়ি বিক্রি করতে না পারলে অনেক চিংড়ি ঘেরে পানির স্বল্পতা দেখা দেয় এবং শীতে চিংড়ি দৈহিক বৃদ্ধি হয় না বললেই চলে। তাই চাষিরা শীত মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে ঘের হতে চিংড়ি বিক্রি শুরু করেন।

কিন্তু যদি পিস হতে সময় বেশি লাগে তাহলে অবশিষ্ট সময়ে চিংড়ি কাঙ্ক্ষিত গ্রেডে পৌঁছায় না। এই অসুবিধা দূর করার জন্য নার্সারি ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। তাই নার্সারি পুকুরে উপযুক্ত পরিবেশ ও উন্নত পদ্ধতিতে চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রেণুকে যত দ্রুত সম্ভব পিচ (কিশোর) চিংড়িতে পরিণত করা প্রয়োজন। সাধারণত নার্সারি পুকুরে প্রতি শতাংশে ১০০০টি রেণু ছাড়া ভালো। রেণুর দ্রুত বৃদ্ধির জন্য উচ্চ প্রোটিন মান ও ক্যালরি সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা দরকার।

বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে গলদা চিংড়ি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, শুধু গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা না বাড়িয়ে যদি উৎপাদন দ্বিগুণ বা আরও অধিক বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এনসিপির সংগঠক শিরীনকে সাময়িক অব্যাহতি Sep 15, 2025
img
নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করছে তারা সচিবালয়ে অবস্থান করছে: ফারুক Sep 15, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন হয়েও মূল পর্বে খেলছে না ঋতুপর্ণা-মনিকাদের রাঙামাটি Sep 15, 2025
img
সেমন্তী সৌমির পছন্দ দেশি ছেলে! Sep 15, 2025
img
চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করতে হবে : চসিক মেয়র Sep 15, 2025
img
রাজপথ নয়, এখন সময় জনগণের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার : আমীর খসরু Sep 15, 2025
img
শৈশবে ভোরে ফুল বিক্রি করে ইডলি কিনতেন ধানুশ Sep 15, 2025
img
যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া দুই ডিসি প্রত্যাহার Sep 15, 2025
img
২ কোটি ২৮ লাখ টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি : তনুশ্রী দত্ত Sep 15, 2025
নায়িকা মানেই প্রতিদ্বন্দ্বী? আনুশকা-প্রিয়াঙ্কার দ্বন্দ্ব ফের সামনে এলো | Sep 15, 2025
img
বাংলাদেশ ম্যাচের আগে আফগানিস্তান দলের জন্য দুঃসংবাদ Sep 15, 2025
img
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের বৈঠক Sep 15, 2025
img
চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন : দ্বিতীয় দিনে মনোনয়ন নিলেন ১৪১ জন Sep 15, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানানোর সহযোগীদের নাম প্রকাশ করলেন মাহমুদুর রহমান Sep 15, 2025
নেপালের নোবেল-বঞ্চিত হওয়ার কারণ বললেন শাওন! Sep 15, 2025
img
দেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে : আবুল খায়ের ভূঁইয়া Sep 15, 2025
পিআরের দাবিতে একইদিনে মাঠে নামছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন! Sep 15, 2025
জকসুর দাবি শিবিরের, কাল থেকে কর্মসূচি ! Sep 15, 2025
img
শুল্কের চাপে বাণিজ্যে ধস, দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বৈঠক Sep 15, 2025
ভারতীয় শুল্কনীতিতে কড়া বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র! Sep 15, 2025