গাঁদা ফুল চাষ পদ্ধতি

শীতকালীন ফুলগুলির মধ্যে গাঁদা অন্যতম। বিবাহ, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গৃহসজ্জা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাঁদা ফুলের বিকল্প নেই। কেটে যাওয়া ত্বকের রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কাটা ঘা শুকাতে ও জীবাণুনাশক হিসেবে গাঁদা পাতার রস খুব উপকারী। ফলে এই ফুলের চাহিদা সারাবছর ব্যাপী। অনেকেই এখন এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। গাঁদা ফুলে বহু প্রজাতি থাকলেও বাংলাদেশে সাদা, জাম্বো ও রক্ত বা চাইনিজ গাঁদার চাষ হয়ে থাকে।

জলবায়ু ও মাটি
গাঁদা ফুলের জন্য মৃদু ঠাণ্ডা আবহাওয়া ভালো। সাধারণত ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ও বেশি ফুল ফোটে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে গেলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও ফুল ফোটা কমে যায়। তীব্র ঠাণ্ডাতেও গাছের সমস্যা হয়। মাটির অম্লান বা পিএইচ ৫.৬ থেকে ৬.৫ গাঁদা ফুল চাষের জন্য ভালো।

গাঁদা ফুলের গাছ যেকোনো কোনো মাটিতে জন্মে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এঁটেল মাটি ও দোআঁশ মাটি হলে ভালো হয়। অবশ্যই দেখতে হবে মাটিতে যেন অধিক জল না জমে। পাশাপাশি সূর্যের আলো যেন ঠিকঠাক পায়।

চাষাবাদ
বছরে তিন মৌসুমে গাঁদা ফুলের চাষ করা যায়- বর্ষা, শীত ও গ্রীষ্ম। প্রায় সারাবছরই ফুল ফোটে। বর্ষা মৌসুমে বীজ বুনতে হয় জুনের মাঝামাঝি, চারা রোপণ মধ্য জুলাইতে। শীত মৌসুমে বীজ বুনতে হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি, চারা রোপণ করতে হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি। গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য বীজ বুনতে হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, চারা রোপণ করতে হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চে।

বীজতলা বা বেড, গামলা টব, পলিব্যাগ, প্লাস্টিকের কাপ, ট্রে ইত্যাদিতে এর চারা উৎপাদন করা যায়। বীজের মাধ্যমে চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলার মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। বীজতলায় নিয়মিত পানি দিতে হবে। বীজ বোনার পর ৫-৭ দিনের মধ্যেই চারা গজায়। চারাগুলো ১.৫ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হলে আগা কেটে দিতে হবে। যাতে চারা অতিরিক্ত লম্বা হয় না।

মূল জমিতে রোপণের ক্ষেত্রে বীজ থেকে প্রাপ্ত চারা তিন থেকে চার পাতা বিশিষ্ট হলে ভালো। বিকালে যখন রোদের তাপ কমে যাবে, তখন জমিতে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে দুই হাত এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ছয় ইঞ্চি। চারাগুলো লাগানোর আগে পাত্রে পানি নিয়ে দুই চা-চামচ ডায়াথেন-এম ৪৫ ওষুধ মিশিয়ে চারাগুলো ওই পানিতে ভিজিয়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট পর তুলে লাগালে চারার মৃত্যুহার অনেক কম হবে।

পরিচর্যা
বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ১৫-২৯ টন গোবর সার মিশিয়ে চাষ দিলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর সেচ দিতে হবে। জমিতে ১০০:৭৫:৭৫ অনুপাতে নাইট্রোজেন, পটাশ ও ফসফেটঘটিত সার দিতে হবে। গাঁদা ফুলের আকার বড় ও রঙ ভালো করার জন্য বোরণ ও জিংক সার দিতে হবে। নাইট্রোজেনঘটিত ইউরিয়া সারের অর্ধেক এবং অন্যসব সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া চারা রোপণের ৩০-৪০ দিন পর সারির মাঝে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

জমিতে কোনো আগাছা জন্মাতে দেয়া যাবে না। গাছ ঝোপালো ও বেশি ফুল পাওয়ার জন্য প্রথম কুঁড়িগুলো চিমটি দিয়ে ফেলে দিতে হবে। চারা লাগানোর সাধারণত ৪০ দিন পর এ কাজ করতে হয়। বেশকিছু রোগ গাঁদা ফুলগাছকে আক্রমণ করে যেমন- গোঁড়া পচা, কলার রট, ঢলে পড়া, পাতায় দাগ, পাতা ঝলসা, ফুল পচা, পাউডারি মিলডিউ, মোজাইক ইত্যাদি। বিভিন্ন পোকামাকড়ের মধ্যে লাল মাকড় ও জাব পোকা গাঁদা ফুলগাছের বেশি ক্ষতি করে। এসব রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ফুল-পাতা তোলা ও ফলন
চারা লাগানোর ৪০-৫০ দিন পর থেকেই গাছের ফুল তোলা শুরু করা যায়। জাত ও প্রকারভেদে এ সময় কমবেশি হতে পারে। সকালে ফুল তুলতে হয়। পাতা ব্যবহার করতে চাইলে যে কোনো সময় তা তোলা যায়। ফুল তোলার আগে জমিতে একবার সেচ দিলে তাতে ফুলের মান ভালো হয়। ফুল ফোটা প্রায় ৩ মাস ধরে চলতে থাকে। এ সময়ের মধ্যে একটি গাছ থেকে প্রায় ১০০-১৫০ টি ফুল পাওয়া যায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

আসছে জুলাই ঘোষণা: স্থগিত হতে পারে সংবিধান, সরকারে রথবদলের ইঙ্গিত Jul 01, 2025
img
চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও ৩ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 01, 2025
img
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কিরকুক বিমানবন্দরে রকেট হামলা Jul 01, 2025
img
অভিনয় থেকে দুই মাস দূরে থাকবেন জোভান Jul 01, 2025
img
নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শিগগিরই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে যাচ্ছে ইরান: আব্বাস আরাঘচি Jul 01, 2025
‘আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা’: ইলন মাস্ক Jul 01, 2025
img
উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ফ্রান্স Jul 01, 2025
img
সব আওয়ামী লীগারেরাই মেন্টালি সিক, তাদের থেরাপি ও রিহ্যাবে পাঠানোর পরামর্শ পিনাকির Jul 01, 2025
img
সবচেয়ে বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হজ আয়োজন ২০২৫ সালে Jul 01, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৯ দিনেই এসেছে ২৭০ কোটি ডলার Jul 01, 2025
img
'সৌদি আরবই এখন আমার ঠিকানা' Jul 01, 2025
img
শাকিব খানের ‘মেগাস্টার’ ট্যাগ নিয়ে তোপের মুখে জাহিদ হাসান Jul 01, 2025
img
পুরো অর্থনীতিই এখন মব এবং মামলার বাণিজ্যের মধ্যে ঢুকে গেছে : গোলাম মাওলা রনি Jul 01, 2025
img
১টি ত্রিপল, ৩টি সেঞ্চুরি - এক ইনিংসে ৮২০ রানের কীর্তি Jul 01, 2025
img
‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ অভিনয় করে কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সেই মুন্নি! Jul 01, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ Jul 01, 2025
img
'ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা এখনও আমার ভিতরে আছে তা আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে' Jul 01, 2025
img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025