ঘরে থাকার সময়টাতে যেভাবে সুস্থ থাকবেন?

করোনাভাইরাসের কারণে সামনের বেশ কয়টা দিন আমাদের অনেককেই ঘরে বসে কাটাতে হবে। যারা ঘরে বসে কাটাবেন, তারা এই সময়টাকে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার কাজে লাগাতে পারেন।

শুধু সুস্বাদু খাবারে মনোনিবেশ করবেন না, এই সময় মনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং সচেতনভাবে অনুশীলন করা প্রয়োজন। আপনাকে অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারাতে ফিরে আসতে হবে এবং স্বাভাবিক ব্যস্ত জীবনকে একটি স্বাস্থ্যকর পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

একটি সময়সূচী তৈরি করুন
কাগজ-কলম নিয়ে দিনের বেলা আপনি যা করবেন, সেগুলি নোট করুন। লিখে নিলে সেগুলি অনুসরণ করা আপনার পক্ষে সহজ হবে। একটি সুন্দর পরিকল্পনা সুস্থ থাকার অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করে, যা সময়সূচী অনুসরণ করতে আপনাকে সহায়তা করবে।

একটি শরীরচর্চার রুটিন তৈরি করুন
বাড়িতে থাকার সময়টাতে ব্যায়ামের একটি রুটিনে তৈরি করে নিন। আপনি যদি ওজন হ্রাস করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন, তবে এই সময়ের সেরা ব্যবহার করুন। এর জন্য আপনার জিম বা পার্কে যাওয়ার দরকার নেই। কেবল আপনার বাড়ির একটি কোণ দরকার, যেখানে শরীরচর্চা করার পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এটি আপনার বাগান কিংবা থাকার ঘর হতে পারে। ইন্টারনেটে উপলব্ধ প্রচুর ওয়ার্কআউট রুটিন রয়েছে, যা আপনি নিজের বয়স ও শরীরের ধরণ অনুসারে বেছে নিতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর নাস্তা করুন
নাস্তা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রচলিত একটা প্রবাদ হলো- ‘রাজার মতো’ নাস্তা করতে হবে। আপনার নাস্তা পুষ্টিকর খাবার দ্বারা সমৃদ্ধ করুন। এর জন্য নাস্তায় বিভিন্ন ধরণের খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন এবং বিভিন্ন খাবারের সংমিশ্রণ ঘটান। নাস্তাকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করতে আপনি ফল, ওট, কর্নফ্লেক্স, ডিম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

কাজ করার পরিবেশ তৈরি করুন
যদি আপনাকে বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়, তবে আপনাকে অফিসে যেমন কাজ করতে হতো তেমনটা বাসায় বসে অনুসরণ করতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে কাজ শেষ করতে নিজের জন্য একটি ওয়ার্কস্টেশন তৈরি করুন। নিজেকে একটি আরামদায়ক টেবিল বরাদ্দ করুন এবং অফিসের টেবিলের মতো সেট আপ করুন।

এখন একটি আরামদায়ক চেয়ার বেঁছে নিন, তবে খুব আরামদায়ক নয়, কারণ এটি আপনাকে অলসতার দিকে নিয়ে যাবে। বিছানায় বসে বা সোফায় বসে কাজ করবেন না, কারণ এটি আপনার দেহভঙ্গি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে।

সংক্ষিপ্ত বিরতি নিন
আমাদের দেহের ক্ষয়ে যাওয়া শক্তি পূরণ করতে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন। নিজেকে দিনের বাকি সময় ধরে কর্মক্ষম রাখার জন্য মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। কাজের সময় তিন থেকে চার বার ছোট বিরতি নিন। বিরতির সময়কাল সম্পর্কে আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন এবং এই নির্দিষ্ট বিরতিগুলি না বাড়ানোর চেষ্টা করুন।

দুপুরে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
দুপুরে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন এবং আপনার পরিবারের সঙ্গে এটি খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুপুরের খাবারে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে হবে; এই খাবারে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের পুষ্টি, প্রোটিন ও ফ্যাট থাকতে হবে। আপনি যা খেতে অভ্যস্ত তা পুনঃ মূল্যায়ন করুন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন, কেবল ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান।

ঘরের ভেতর হাঁটার অভ্যাস করুন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে থাকলে তা আপনার দেহকে শক্ত করে তোলে। এটি মেরুদণ্ড ও জয়েন্টের ব্যথা বাড়ায়। আপনার ডেস্ক থেকে একবার উঠুন এবং নিজের ঘরের ভিতরেই ছোট করে হেঁটে নিন। এটি আপনার জয়েন্টগুলি ঠিক রাখতে সহায়তা করবে।

পাশাপাশি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিন এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। কাজ বাদে নিজের পছন্দের সিনেমাটি দেখতে পারেন, বাগান করতে পারেন, শখের কাজ শুরু করতে পারেন এবং এমনকি নিজেকে আটকে রাখতে ছবিও আঁকতে পারেন।

সময়মতো রাতের খাবার খান
সুস্থ মন এবং শরীরের জন্য রাত ৮ টার আগে রাতের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রাতের খাবার দিনের সবচেয়ে হালকা খাবার হওয়া উচিত এবং অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে কেবল খাবেন এবং অহেতুক পেট ভরাবেন না।

পর্যাপ্ত ঘুমান
ঘুম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, বিপাকক্রিয়া এমনকি আমাদের শেখার প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা আমাদের আগামী দিনের শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। আমাদের মন ও শরীর উভয়ই সুস্থ রাখার জন্য ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ভালো ঘুম জরুরি। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: