করোনাভাইরাস বদলে দেবে প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা

কোভিড-১৯ মহামারীর মতো এমন ভয়াবহ মৃত্যু মিছিল বিশ্বজুড়ে সম্প্রতি সময় যুদ্ধ ছাড়া আর দেখা যায়নি। এই ভয়াবহ ছোঁয়াচে ভাইরাসটির ফলে ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশেই জনজীবনে অচলাবস্থা নেমে এসেছে।

এতদিন যেখানে সামাজিক দূরত্ব বা বিচ্ছিন্নতা নিয়ে মানুষ চিন্তিত হয়ে উঠেছিল এখন সেটিই হয়ে উঠেছে অনুশীলনের বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মহামারীর ফলে বিশ্বজুড়ে বদলে যাবে আমাদের চেনাজানা অনেক কিছুই।

আসুন জেনে নিই, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব পরবর্তী বিশ্বজুড়ে সরকার ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসতে পারে-

অনলাইনে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা হতে পারে
করোনার প্রকোপে বাধ্য হয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা শুরু করেছে। এর থেকে সত্যিকার অর্থে কংগ্রেসও (সংসদ) উপকার পেতে পারে। আমরা চাই, এই সঙ্কটের মুহূর্তেও সংসদ তাদের কার্যক্রম চালু রাখুক। কিন্তু জন-বিচ্ছিন্নতার বিধান মেনে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করা এই মুহূর্তে প্রায় অসম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত দুজন কংগ্রেস সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এটাই বরং, সংসদ সদস্যদের জন্য উপযুক্ত সময়, তারা তাদের নিজ এলাকাতে ফিরে যাক এবং স্থায়ীভাবে অনলাইনে আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করুক। এটি যে শুধু সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় এমনটা নয়, এর আরও অনেক উপকারিতাও আছে।

এর মধ্য দিয়ে সংসদরা তাদের ভোটারদের কাছাকাছি থাকতে পারবে। ভার্চুয়াল সংসদে লবিবাজি করা কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ, তখন লবিবাজদের দেশজুড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে। সংসদে দলবাজিও কমে যাবে, কারণ সাংসদরা তখন দলবাজির ঊর্ধ্বে স্থানীয় জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে শুরু করবে।

এছাড়াও ভার্চুয়াল সংসদ আমাদেরকে আরেকটি সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে। তা হলো- সংসদের আকার বাড়াতে কোনো বাঁধা থাকবে না। আরও বেশি জনপ্রতিনিধি ভার্চুয়াল সংসদের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে সহজেই যুক্ত হতে পারবেন।

বৃহত্তর পরিচালনা পর্ষদের উপর আস্থা ফিরে আসবে
করোনাভাইরাসের ফলে ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিদিন বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মতৎপরতা দেখতে পাচ্ছি। অন্যান্য সময় তাদের এতটা তৎপর দেখা যায়না।

প্রতিদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ব্রিফিং করছেন, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা আসছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সঙ্কটের ফলে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

এখন আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে অনুদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্ব উপলব্ধ হচ্ছে। করোনা পরবর্তী সময়েও আমাদের জাতীয় পর্যায়ে নানা বৃহত্তর উদ্যোগের প্রয়োজন হবে।

সরকারি সেবা তার সোনালী যুগ ফিরে পাবে
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রমরমা বাজার শেষ হতে চলেছে। সরকারি সেবা মানেই নিম্ন মানের সেবা, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে সে ধারণা বদলে যাবে। কারণ বিশ্বজুড়ে সরকারী হাসপাতালগুলি করোনা প্রতিরোধে লড়াই করে চলেছে।

এই দুর্যোগ প্রমাণ করে দিল জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি সেবার কোনো কার্যকর বিকল্প নেই। এতদিন মানুষ সরকারি সাহায্য চাইতেও অনেকক্ষেত্রে ভয় পেত, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারাও যে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসেন এবার সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।

সরকারী চাকুরীজীবী শুনলেই এতদিন মানুষ যেভাবে কটাক্ষের দৃষ্টিতে তাকাতো সে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। সরকারি কাজের সঙ্গে দেশপ্রেম নতুন করে গাঁটছড়া বাধতে শুরু করেছে এই মহামারীর ফলে।

প্রচলিত অনেক নিয়ম কানুন বদলে যাবে
করোনা পরবর্তী সময় প্রচলিত অনেক নিয়ম কানুন বদলে যাবে। শ্রমিকদেরকে অসুস্থতার ছুটি মঞ্জুর করা হবে, বিদ্যুৎ বা পানির বিল বকেয়া থাকলে চট করে লাইন কেটে দেয়া হবে না। ব্যাংকগুলি সুদের জন্য জামানত বাজেয়াপ্ত করার বদলে সময় দিতে বাধ্য হবে। ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট সুযোগও দেয়া হবে।

এটা নিশ্চিত যে দুর্যোগের সময় কোনো নিয়মকানুন খাটে না। এর ফলে আপনি অবাক হয়ে ভাববেন, তাহলে আগে কেন এ রকম নিয়ম ছিল। এটা এমন নয় যে, সাময়িকভাবে সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে চলমান সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খোঁজা হবে, বরং সঙ্কট পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য এই নতুন নিয়মগুলি স্থায়ী হিসেবে গণ্য হতে পারে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে
করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বিশ্ব আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখেছে কিন্তু এবার তা আগের সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই জরুরি অবস্থার শেষে আমরা দেখতে পাবো ধনী ব্যক্তিরা তাদের ধন সম্পদ নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতে আছে এবং সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে আয়েশের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে, দিন এনে দিন খাওয়া গরীব লোকেরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।

অর্থনৈতিক ধ্বস, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং দীর্ঘদিনের কর্মহীনতার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিরাট অঙ্কের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হবে। রাষ্ট্র দ্রুততম সময়ে এই প্রয়োজন উপলব্ধি করে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে সাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হবে। জনসাধারণ ধরে নেবে যে সরকার তাদের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করছে। তাই, করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে সরকার ও রাষ্ট্রগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: পলিটিকো.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হান্নান মাসউদের এটি দ্বিতীয় বিয়ে, ফেসবুক পোস্টে জাওয়াদ নির্ঝর Sep 20, 2025
img
সংবিধান সংশোধন ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি হবে প্রহসনের নির্বাচন : বুলবুল Sep 20, 2025
img
৫৬ হাজার টাকায় বিক্রি পদ্মার ১৬ কেজির রুই মাছ Sep 20, 2025
img
ভারত ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলন বাতিল করল পাকিস্তান Sep 20, 2025
img

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিচ্ছে সরকার Sep 20, 2025
img
ফারিয়া তুমি সত্যিই জিতেছো: পিয়া জান্নাতুল Sep 20, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩৮২ Sep 20, 2025
অস্কার প্রতিযোগিতায় ‘হোমবাউন্ড’-এর চমক! Sep 20, 2025
কল্কি ২৮৯৮ এডিতে দীপিকার রহস্যময় ইঙ্গিত! Sep 20, 2025
দ্বিতীয় বরের পরিচয় জানালেন শবনম ফারিয়া Sep 20, 2025
সরকারের অংশ হয়ে কী পেলো তারা? ছাত্র উপদেষ্টাদের বিএনপি নেতার পরামর্শ Sep 20, 2025
‘বিএনপির সমালোচনাকারী’ হিসেবে এনসিপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে যা বললেন মির্জা ফখরুল Sep 20, 2025
img
আগামীতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে না: আনিসুল Sep 20, 2025
img
ভ্রান্ত পরিবেশ ছাড়পত্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় : রিজওয়ানা Sep 20, 2025
img
রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থ বললে হবে না : ড. নজরুল ইসলাম Sep 20, 2025
img
দেশে অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে : তারেক রহমান Sep 20, 2025
img
পিতৃত্বকালীন ছুটি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নতুন সুপারিশ Sep 20, 2025
ডাকসু নির্বাচনে আমাকে ভিলেন বানানো হয়েছে - আবিদ Sep 20, 2025
img
কাজের চেয়ে কথায় বড় হয়ে উঠছেন রশিদ খান! Sep 20, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে : মান্না Sep 20, 2025