কোভিড-১৯ : দেশে দেশে বদলে যাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সমগ্র পৃথিবীতে অনেক কিছুই বদলে যাবে। আমাদের চেনা জানা নানা ব্যবস্থাই নতুন রূপ ধারণ করবে। বদলে যাবে আমাদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সরকার ব্যবস্থা, অর্থনীতি, সম্প্রদায়, সমাজসহ অনেক কিছুই। আসুন জেনে নিই, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসতে পারে-

টেলিমেডিসিন জনপ্রিয়তা পাবে
টেলিমেডিসিন বলেতে দূর থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়াকে বোঝায়। মহামারীর ফলে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার ধরণ বদলে যাবে, জনপ্রিয়তা পাবে টেলিমেডিসিন সেবা। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে অতিরিক্ত ভিড় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় মানুষ টেলিমেডিসিনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।

মহামারী পরবর্তী বিশ্বে দূর থেকে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ ক্রয়ের চাহিদা বেড়ে যাবে। মানুষ হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে ছুটে যাওয়ার বদলে ঘরে বসে ইন্টারনেটে সেবা নিতে চাইবে।

দূর থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নেয়ার বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে; আপনাকে যানবাহন ব্যবহার করে জ্যামে বসে ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে হবে না, ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করতেও হবে না। আবার এর ফলে, যেসব রোগীর জরুরি সেবা দরকার তারাও সহজে জরুরি সেবা পেয়ে যাবেন।

পারিবারিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আমাদের পারিবারিক স্বাস্থ্য সেবা খাতের দুর্বলতাগুলি উন্মোচিত করেছে। এর ফলে আমরা জেনে গেছি, আমাদের পারিবারিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

এই প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের প্রিয়জনেরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, বাচ্চারা দীর্ঘদিন স্কুলে না গিয়ে ঘরে বন্দী হয়ে পড়েছে এবং আমাদের অর্থের যোগানে টান পড়ে গেছে। শিশু সেবার অপ্রতুলতাও এই মহামারীর ফলে দেখা গেছে, বিশেষত যাদের বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা অফিসে ব্যস্ত ছিলেন, সেসব শিশু মারাত্মক বিপন্ন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে।

খুব কম কর্মজীবী লোকই পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার জন্য সবেতনে ছুটি পেয়েছেন। ফলে, দেখা যাচ্ছে আমাদের পারিবারিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, প্রিয়জনের অসুস্থতার সময় সেবা করতে গিয়ে আমাদের আয়ের উৎস থমকে যাচ্ছে।

এই সঙ্কটের ফলে বিশ্বজুড়ে পারিবারিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য জনমত ও রাজনৈতিক সমর্থন তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে অর্থ সংগ্রহের নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই ফান্ডের মাধ্যমে কর্মজীবী লোকদের পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার সময় নানা রকম সহায়তা দেয়া হবে এবং শিশুদের সেবার নানা উদ্যোগ নেয়া হবে।

সরকার বৃহত্তর ওষুধ উৎপাদনকারীতে পরিণত হবে
এই সঙ্কটের ফলে দেখা গেছে, আমাদের বাজার নির্ভর চিকিৎসা পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থা কতটা নাজুক এবং এ রকম একটা বৈশ্বিক মহামারীর সময় সরকারি উদ্যোগে ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা পণ্য উৎপাদন কতটা দরকারি। বিভিন্ন দেশের সরকার ইতিমধ্যে চিকিৎসা পণ্য নিয়ে গবেষণা, উৎপাদন ও বণ্টনে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

তাছাড়া, বেসরকারি খাতে চিকিৎসা পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের নানা ত্রুটি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, এই করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসা খাত প্রচণ্ডভাবে সরকারি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বেসরকারি খাত এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনেকাংশেই ব্যর্থ। বিশ্বজুড়ে করোনা পরীক্ষার কিট, পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লভস প্রভৃতির ব্যাপক সংকট পরিলক্ষিত হয়েছে।

ফলে সুদূর ভবিষ্যতে বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার চিকিৎসা পণ্য ও ওষুধ উৎপাদনে আরও বড় ভূমিকা পালন করবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

বিজ্ঞান তার সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবে
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান তার সাম্রাজ্য হারাতে বসেছিল। কিন্তু এই মহামারীর ফলে দেখা গেল, আমাদের সুস্থতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিজ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানের উপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতেও সহায়তা করবে।

বিজ্ঞান নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অবিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিপরীতে অতিপ্রাকৃতের উপর মানুষের যে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল, সে সমীকরণ এর ফলে পাল্টে যাবার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়াও বিজ্ঞানের নানা গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধি পাবে, বাজেটেও বিজ্ঞান গবেষণা ও চর্চায় বিশেষ মনোযোগ দেয়া হতে পারে। কারণ, এই মহামারী আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সামরিক খাতে বাজেট বাড়ানোর থেকেও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণায় বাজেট বাড়ানো বেশি প্রয়োজনীয়। কারণগুলি বা বোমা দিয়ে ভাইরাস হত্যা করা যায় না। তথ্যসূত্র: পলিটিকো.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা সন্ধ্যায়, এরপর প্রচার-প্রচারণা Sep 14, 2025
img
নির্বাচনকে সামনে রেখে এক ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে : জাহেদ উর রহমান Sep 14, 2025
img
কারাবন্দি আসামিদের সাজার মেয়াদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
পটুয়াখালীর বাউফল আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম আটক Sep 14, 2025
img
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ Sep 14, 2025
img
মেক্সিকোর ইউকাতানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ Sep 14, 2025
img

জুলাই অভ্যুত্থান

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Sep 14, 2025
img
আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবন-২ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
ডাকসু নেতাদের মধ্য থেকে ৫ সিনেট সদস্য নির্বাচিত Sep 14, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে দুবাই পুলিশের কড়া সতর্কবার্তা Sep 14, 2025
img
মেসির পেনাল্টি মিস, শার্লটের কাছে বড় হার মিয়ামির Sep 14, 2025
img
হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে হামবুর্গকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন Sep 14, 2025
img
এখনো আমরা ডোর টু ডোর শিক্ষার্থীদের কাছে যাব: সাদিক কায়েম Sep 14, 2025
img
বিএনপি নির্বাচিত হলে দুই মাসে গ্যাস সুবিধা পাবে নাটোরবাসী: দুলু Sep 14, 2025
img
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শাকিব খানের শোকবার্তা Sep 14, 2025
img
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা Sep 14, 2025
img
নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে জনতার ভোটে, ঘোষণা আজ Sep 14, 2025
img
রণবীর-দীপিকার বিচ্ছেদ নিয়ে নীতু কাপুরের মন্তব্য Sep 14, 2025
img
ভেঙে দেয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল চায় নেপালের শীর্ষস্থানীয় আট দল Sep 14, 2025
img
জিম্মি চুক্তির পথে প্রধান বাধা নেতানিয়াহু Sep 14, 2025