করোনায় মৃত্যু ঠেকাচ্ছে যক্ষ্মার টিকা!

যক্ষ্মা রোগের টিকায় কমতে পারে করোনাভাইরাস জনিত কোভিড-১৯ রোগে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর হার। মেডআরএক্সফোর জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত বিভিন্ন দেশ কতটা প্রভাবিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে বাসিলাস ক্যালমেট গুয়েরিন (বিসিজি) বা যক্ষ্মারোগের টিকা। বিসিজি টিকা যক্ষ্মারোগ ও শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ জনিত নানা রোগের সংক্রমণ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।

দেশ ভেদে শিশুদের যক্ষ্মারোগের টিকা প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা ও কোভিড-১৯ রোগটির প্রকোপের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো যেসব দেশ যক্ষ্মারোগের টিকা সংক্রান্ত কোনো বৈশ্বিক নীতিমালা গ্রহণ করেনি, সেসব দেশে কোভিড-১৯ রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

আবার ইরান বিসিজি নীতিমালা গ্রহণের পরেও দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুহার প্রতি মিলিয়নে ১৯.৭। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ইরান তুলনামূলকভাবে অনেক পরে ১৯৮৪ সালে যক্ষ্মারোগের টিকাদান নীতিমালা গ্রহণ করে এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রবীণেরা অধিকাংশই এই টিকার আওতার বাইরে ছিলেন।

ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্কসহ বেশকিছু মধ্য ও উচ্চ আয়ের ইউরোপীয় দেশ ১৯৬৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিসিজি নীতি থেকে সরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ইউরোপীয় যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে আগে এই কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল এবং বেশিদিন কর্মসূচী বহাল রেখেছে, অর্থাৎ যাদের প্রবীণ লোকেরা অধিক সংখ্যায় যক্ষ্মারোগের টিকা পেয়েছেন, সেসব দেশে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম।

স্পেন ১৯৬৫-১৯৮১ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর তাদের বিসিজি টিকাদান কর্মসূচী বহাল রেখেছিল, কিন্তু দেশটিতে মৃত্যুর হার বেশি। অপরপক্ষে, ডেনমার্ক ১৯৪৬-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর বিসিজি টিকাদান কর্মসূচী চালিয়ে গেছে এবং দেশটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার স্পেনের তুলনায় ১০গুণ কম।

অন্যদিকে, জাপান ১৯৪৭ সাল থেকেই যক্ষ্মারোগের টিকাদান নীতিমালা গ্রহণ করেছে এবং দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইতালির তুলনায় খুবই নগণ্য। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, প্রাথমিক পর্যায়ে জাপানে কয়েকটি ঘটনা শনাক্ত হয়েছিল, তবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নীতি অবলম্বন না করার পরেও দেশটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার খুব কম। গবেষণায় চীনকে তুলনামূলকভাবে দ্রুত বিসিজি নীতিমালা গ্রহণকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার মতো যেসব বিষয় মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে, তার ভিত্তিতে দেশগুলিকে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছিল।

গবেষণার ফলাফল বলছে- যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে দ্রুত যক্ষ্মারোগের টিকাদান কর্মসূচী গ্রহণ করেছে এবং তা চালিয়ে গেছে সেসব দেশে তুলনামূলকভাবে কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর হার কম। অর্থাৎ যেসব প্রবীণ লোক টিকা পেয়েছেন তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগটিতে মারাত্মক ভাগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। তবে কোন দেশ কত সালে এই কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তার সঙ্গে মোট সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি বলেও গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় ব্যবহৃত সংখ্যা কোন দেশে কত বেশি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে এবং শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তার উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল বলে স্বীকার করেছেন গবেষকরা। এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা এবং এর ফলাফল চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রয়োগের পূর্বে এখনো আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তথ্যসূত্র:মেডআরএক্সফোর

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025
img
জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি আগামী সোমবার Jul 01, 2025
img
পাকিস্তানে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম Jul 01, 2025
img
আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আরেক মেয়াদে টিটুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করল বাফুফে Jul 01, 2025
img
জাতীয় দলের নতুন নির্বাচক হিসেবে শিপনকে চায় বিসিবি Jul 01, 2025
ফেসবুক পোস্টে এই দিনটি স্মরণ করলেন উমামা ফাতেমা Jul 01, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদের মায়ের দোয়া নিয়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু Jul 01, 2025
img
‘রামায়ণ’ এর শেষের দিনে চোখের জল আটকালেন না রণবীর! Jul 01, 2025
img
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু Jul 01, 2025
img
স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি : প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আগামী ৫ দিন টানা বৃষ্টির আভাস Jul 01, 2025
img
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করল পাকিস্তান Jul 01, 2025
img
সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় মব হয়েছে : মোশাররফ আহমেদ Jul 01, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩ হাজার, হাসপাতালে ২১৭ জন ভর্তি Jul 01, 2025
img
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে, জুলাই ক্যালেন্ডার উদ্বোধনে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
বিসিবি ছাড়ছেন সামি, জানালেন কারণ Jul 01, 2025
img
আসিফ মাহমুদের বিচার করা উচিত : নিলুফার মনি Jul 01, 2025