কালের সাক্ষী মুক্তাগাছার রাজবাড়ি

বাংলাদেশের বুকে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা। যে স্থাপনাগুলোর মাধ্যমে ফুটে উঠে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা। এমনি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন রাজবাড়ি।

ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজবাড়িটির অবস্থান। ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহাসড়কের সংযোগস্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে গেলেই দেখা মিলবে বাড়িটির। প্রায় একশত একর ভূমির উপর বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত।

রাজবাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন জমিদার আচার্য চৌধুরী। তিনি বৃটিশ রাজ কর্তৃক রাজা ও মহারাজা খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। এজন্য বাড়িটি রাজবাড়ি হিসাবেই খ্যাতি লাভ করে।

জানা যায়, আচার্য চৌধুরী বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়া অঞ্চলের বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন। তিনি সেখানে নবাবের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। রাজস্ব বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় মুক্তাগাছাকে তিনি আলাপসিং পরগণার অন্তর্ভূক্ত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। আর তখনেই উপহার হিসেবে নবাব তাকে মুক্তাগাছার জমিদারি প্রদান করে।

পলাশী যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর চার উত্তরাধিকারী রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম বগুড়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আলাপসিং-এ বসবাস করার মনস্থির করে। সেখান থেকে তারা ৪ জন ব্রহ্মপুত্র নদ পেরিয়ে বর্তমান মুক্তাগাছা এলাকায় বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তাগাছার জমিদারির ছিল ১৬টি অংশ। এখানে ১৬ জন জমিদার শাসন করতেন।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার বাড়ির সামনে প্রজাদের জুতো পায়ে ও ছাতা মাথায় দিয়ে যাওয়া ছিল সম্পূর্ণ নিষেধ। কেই এই আইনের লঙ্গন করলে শাস্তি পাওয়া বাধ্যতামুলক ছিল।

প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়িটি বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন। রাজবাড়িটির প্রবেশমুখে রয়েছে কারুকার্যমণ্ডিত বিশাল ফটক। ফটকের পাশেই রয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দির। রাজবাড়ির ভিতরে ঘূর্ণায়মান একটি রঙ্গমঞ্চ, রাণীর অন্দরমহল, রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের তৈরি অসাধারণ রাজপ্রাসাদ। রয়েছে প্রায় ১০ হাজার দুর্লভ বই সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। আরও আছে দরবার হল, লক্ষ্মীপূজা আর দুর্গাপূজার ঘর, কাচারিঘর। আর রয়েছে একটি গোপন সুড়ঙ্গ। রাজবাড়ির মূল ফটকের সামনেই রয়েছে সাতঘাটের বিশাল পুকুর। পুকুরের পাশেই দুর্লভ প্রজাতির নাগলিঙ্গম/নেগুরা বৃক্ষ রয়েছে। রাজবাড়িটির পাশেই আছে আরো দুটি রাজবাড়ি আছে। যার একটি শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ অন্যটি আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রাচীন এই রাজবাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটকের ভিড় জমে। বর্তমানে রাজবাড়িটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বে রয়েছে।

যেভাবে যবেন: ঢাকা থেকে সড়ক পথে ময়মনসিংহে আসতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামীম এন্টারপ্রাইজ, সৌখিনসহ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। সময় নিবে আড়াই থেকে চার ঘন্টা । এছাড়াও কমলাপুর, বিআরটিসি টার্মিনাল থেকে ঢাকা-নেত্রকোনা রুটের গাড়িতেও ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। এনা ট্রান্সপোর্টে ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা। তাছাড়া সৌখিন পরিবহন-১৫০ টাকা। ময়মনসিংহ থেকে ইজিবাইক বা সিএনজি যোগে যেতে পারেন মুক্তাগাছা রাজবাড়ি। ভাড়া লাগতে পারে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকা থেকে সরাসরি মুক্তাগাছাতেও রয়েছে কয়েকটি পরিবহন বাস।

এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল ৭টা ২০ মিনিটে), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর ২টা ২০ মিনিটে), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে), অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস (সন্ধ্যা ৬টা), হাওড় এক্সপ্রেস (রাত ১১টা ১৫ মিনিটে) ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ভাড়া শ্রেণিভেদে ১০০ থেকে ৩৬০ টাকা। সেখান ইজিবাইক বা সিএনজি যোগে যেতে পারেন মুক্তাগাছা রাজবাড়ি।

থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য ময়মনসিংহ শহর এবং মুক্তাগাছাতে রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। একটু ভালো মানের হোটেলের জন্য ময়মনসিংহে থাকতে পারেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আমির ইন্টান্যাশনাল (০১৭১১১৬৭ ৯৪৮), হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশলনাল (০১৭১৫১৩৩ ৫০৭), হোটেল হেরা (০১৭১১১৬৭ ৮৮০) হোটেল সিলভার ক্যাসেল (০৯১৬৬১৫০, ০১৭১০৮৫৭ ০৫৪), হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল (০৯১৬৫৯৯৫)।

খাওয়া দাওয়া: শহরের কেন্দ্রস্থলের প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাওয়ের আছে বেশ সুনাম। হোটেল সারিন্দা ও হোটেল ধানসিঁড়িও ভালো । এছাড়াও রয়েছে মাঝারি ও নিম্নমানের বেশ কিছু হোটেল। মুক্তাগাছাতেও রয়েছে বেশ কিছু খাবারে রেস্টুরেন্ট।

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনে একবারের জন্য আমাদের ক্ষমতায় এনে পরীক্ষা করুন: মুফতি ফয়জুল করীম Sep 14, 2025
img
জাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর শিবির সভাপতির কর্মসূচি ঘোষণা Sep 14, 2025
img
কাবুলে মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক Sep 14, 2025
img
ইনস্টাগ্রামে বলিউড গানে নতুন ধাঁধার খেলা Sep 14, 2025
img
সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম কারাগারে Sep 14, 2025
img
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে তারেক রহমান-মির্জা ফখরুলের শোক Sep 14, 2025
img
সুপার ফোরের আশা আছে, ট্রফি জিততেই এসেছি: জাকের Sep 14, 2025
img
শ্রীপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫ জন Sep 14, 2025
img
নেপালিরা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান, কম মতলববাজ : মাসুদ কামাল Sep 14, 2025
img
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার চারজন Sep 14, 2025
img
আল্লাহ চাননি আমি নির্বাচিত হই, হয়তো ভালো কিছু রেখেছেন: আরিফ উল্লাহ Sep 14, 2025
img
লন্ডনে হামলার শিকার উপদেষ্টা মাহফুজের ফেসবুক পোস্ট Sep 14, 2025
img
লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা, নিন্দা জানালো সরকার Sep 14, 2025
img
বাধ্য হয়ে ভারতকে ইলিশ দিতে হচ্ছে: মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক Sep 14, 2025
img
ভোট বর্জন করেও জাকসুর ভিপি-জিএস পদে কত ভোট পেল ছাত্রদল? Sep 14, 2025
img
সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার শোক Sep 14, 2025
img
২৫ বছরের জন্য বাফুফেকে ৮ জেলা স্টেডিয়াম বরাদ্দ Sep 14, 2025
img
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারে সুপার ফোর স্বপ্নে বড় ধাক্কা টাইগারদের Sep 14, 2025
img
জাকসুর ভিপি জিতুর ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের কারণ কী? Sep 14, 2025