মোবাইল ফোনের অ্যাপে বিপদ বাড়ছে না তো?

সম্প্রতি একটি ছবি এডিটিং অ্যাপ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) ব্যবহারকারীরা দারুণ দারুণ সব ছবি সম্পাদনা করছেন। এসব ছবি হয়তো দেখতে সুন্দর ও ব্যতিক্রমী। আবার বহু মানুষ একযোগে এধরনের ছবি নিজ নিজ ফেসবুক পাতায় প্রকাশ করায় এটা এখন একটা ‘ট্রেন্ড’-এ পরিণত হয়ে গেছে। যাকে খাঁটি বাংলায় বলা হয় ‘হুজুগ’। আমরা এধরনের নানা হুজুগে প্রায়ই গা ভাসিয়ে দেই। কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনায় আসে না, ট্রেন্ড বা হুজুগ দেখলেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়া আমাদের উচিত কিনা। অবাক হই, যখন দেখি অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও এধরনের ছেলেমানুষিতে মেতে উঠেন! তারা ভেবেও দেখেননা, হুটহুাট আলোচনায় আসা এ্যাপগুলো তো স্পাই এ্যাপও হতে পারে। আর যদি সেটায় হয়, তবে কি আমরা নিরাপদ?

এধরণের কর্মকান্ড নিয়ে আপনার/আমার এ ধরণের আপত্তির জবাবে একদল মানুষ বলেন, এনআইডি কার্ডের সব তথ্যই তো বাইরের দেশে চলে গেছে। এ্যাপ ব্যবহার করলে আর কিই বা হবে? অনেকেই বলেন, আমাদের ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) কার্ডের সব তথ্য ক্ষমতাধর দেশের হাতে চলে গেছে। বিষয়টি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও এনআইডি কার্ড আছে। তাদের এনআইডি কার্ডও তো একই সার্ভারে সংরক্ষিত। কাজেই দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিরা কি নিজেদের সুরক্ষার কথাও ভাবেন না? অবশ্যই ভাবেন। কাজেই এনআইডি কার্ড নিয়ে আপত্তি অনর্থক।

আচ্ছা, আমরা ধরেই নিলাম আমাদের এনআইডি কার্ডের তথ্য বাইরে চলে গেছে। তারপরও এনআইডি কার্ডের প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে খুব একটা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি? কারণ তাতে তো শুধু আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া রয়েছে। আমি বা আপনাকে যথাযথ ভাবে শনাক্তকরণের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিশ (চোখের ছাপ) এনআইডিতে সংযুক্ত। কিন্তু আমাদের সেলফোন? সেলফোনে কি শুধু নিজের তথ্যই থাকে, নাকি আরও অনেক কিছুই তো থাকতে পারে? কাজেই সেলফোনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রশ্নে এনআইডি কার্ডের তথ্য বেহাত হওয়ার অজুহাত একেবারেই অযৌক্তিক।

বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা এখন চরমে। সুখ-সুবিধার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রয়োগ ও ব্যবহার আমাদের জন্য হুমকিও বটে। যেমন- বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্টফোনের চমকপ্রদ সুবিধা আমরা ভোগ করে থাকি। কিন্তু আমরা কি এসব অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো জানি? অনেকে জানি আবার বেশির ভাগ মানুষই হয়তো জানি না।

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিবীদরা বলছেন, পৃথিবীতে অনেক ধরণের স্পাই অ্যাপ ছড়িয়ে দিয়েছে হ্যাকাররা। সাধারন মানুষ না জেনে না বুঝেই এসব অ্যাপ তাদের সেলফোন ও কম্পিউটারে ইন্সটল করে নেয়। এসব অ্যাপ কোনো ডিভাইসে (মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব ইত্যাদি) ইন্সটল করার পর ওই ডিভাইসের সব গোপনীয় তথ্য ও সুরক্ষাপদ্ধতির তথ্য অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তথা হ্যাকারদের হাতে চলে যায়।

এছাড়া আমরা মোবাইল ফোনে কি কথা বলছি, মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটার দিয়ে কোন কোন ওয়েবসাইট পরিদর্শন করছি, কোথায় লাইক বা কমেন্টস করছি সেটাও নজরদারি করা যায় স্পাই অ্যাপ দিয়ে। পাশাপাশি আপনার/আমার মোবাইল ফোনে সেইভ করা কনট্যাক্টস নম্বর, স্টোরেজ করা ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ছবি এসব স্পাই অ্যাপের মাধ্যমে হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।

এভাবে হ্যাকাররা খুব সহজেই মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দেন। আর এসব অ্যাপ যদি কোনো দেশের গোয়েন্দাবাহিনীর মিশন পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে, তবে পরিণতি বুঝতে পারছেন তো? কাজেই আসুন আমরা হুজুগে গা না ভাসিয়ে বরং সতর্ক ও সচেতন হই। সচেতন ও সংযত না হলে ঘোর বিপদ!

 

লেখক- শাহজাহান নবীন, সাংবাদিক

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নীরবতা অনেক সময় সোনার চেয়েও দামি : প্রেস সচিব Apr 10, 2025
img
প্রশ্নফাঁস যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : শিক্ষা উপদেষ্টা Apr 10, 2025
img
প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ Apr 10, 2025
img
৬০ দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল : শিক্ষা উপদেষ্টা Apr 10, 2025
img
গাজায় অভিযানে আপত্তি, ৯৭০ জন বিমানবাহিনীর সদস্যকে বহিষ্কারের হুমকি দিল ইসরায়েল Apr 10, 2025
img
শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা Apr 10, 2025
img
ট্রাম্পের শুল্ক শিথিলতার ইঙ্গিতেই শেয়ার বাজারে ঝড়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড Apr 10, 2025
img
বেনাপোল থেকে ৪ ট্রাক রপ্তানি পণ্য ফেরত এসেছে Apr 10, 2025
img
চীনের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প, বললেন ‘শি বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের একজন’ Apr 10, 2025
img
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের নারী দল Apr 10, 2025