“টিকা আবিষ্কার হলেও করোনা মহামারি দূর হবে না”

বিশ্ব মিডিয়া করোনাকে নিয়ে যেভাবে ধারাবাহিক প্রচারণা চালাচ্ছে, সেই প্রচারণার সুবাদে সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন শুধু করোনাভাইরাস না; যেকোনো ভাইরাসের একমাত্র কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে ভ্যাকসিন বা টিকা। ফলে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সোস্যাল মিডিয়া ঘরে, বাইরে এমনকি আমলাপাড়া ও মন্ত্রীপাড়া সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে কবে আসবে করোনাভাইরাসের সেই কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন। এর অপেক্ষায় এখন পুরো বিশ্ব।

এই পরিস্থিতিতে করোনা সংকট সামলাতে টিকা আবিষ্কারের জোরালো উদ্যোগ চলছে। কিন্তু জটিল এই প্রক্রিয়া সফল হলেও মহামারি পুরোপুরি দূর হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভাইরাসের মিউটেশনের কারণে বার বার নতুন টিকার প্রয়োজন হবে।

ভাইরাস মোকাবিলায় দ্রুত টিকা আবিষ্কার করার জন্য চাপ বাড়ছে। সাধারণত প্রতিষেধক তৈরির জন্য বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। কিন্তু সময়ের চাপে ছ'টি পর্যায় কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ করার তোড়জোড় চলছে।

সবার আগে গবেষকরা ভাইরাস বিশ্লেষণ করেন। তারপর ভাইরাসের উপাদান ও বাড়তি পদার্থ দিয়ে তাঁরা সম্ভাব্য টিকা তৈরি করেন। তৃতীয় পর্যায়ে পশুর উপর সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়। তারপর চতুর্থ পর্যায়ে মানুষের উপর সেটি প্রয়োগ করা হয়। অবশেষে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে ব্যাপক হারে টিকা উৎপাদন শুরু হয়।

বিজ্ঞানীরা সত্তরটিরও বেশি টিকা প্রকল্পের জন্য দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কয়েকজন গবেষক এরই মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদর উপর টিকা পরীক্ষা করছেন। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষের নাগালে টিকা পৌঁছাতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। গবেষকরা নানাভাবে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

তথাকথিত ভেক্টর ভাইরাস বা পরিচিত ও ক্ষতিকর নয় এমন ‘জীবন্ত' টিকা প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। সেটির মধ্যে কোভিড-১৯-এর জিনোটাইপের অংশবিশেষ চালান করা হয়। ফলে সেটির উপরের স্তরে করোনাভাইরাসের মতো প্রোটিন সৃষ্টি হয়। এমন ‘ছদ্মবেশী' ভাইরাস মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বরং টিকা নেবার পর মানুষের শরীরের প্রতিরোধ শক্তি প্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে। তখন শরীর আসল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে শেখে।

অন্যরা মৃত টিকা অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের নষ্ট করে দেয়া অংশ নিয়ে গবেষণা করছেন। এভাবেই টিটেনাস ও ফ্লু মোকাবিলা করতে টিকা তৈরি হয়েছিল। তবে এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত বিশাল পরিমাণ টিকা তৈরি করা কঠিন হবে।

সর্বশেষ প্রবণতা হলো জিন-ভিত্তিক টিকা। তার জন্য ভাইরাস থেকে তথাকথিত আরএনএ বা জেনেটিক গঠনের নির্দেশিকা বার করে নেয়া হয়। এই আরএনএ দিয়ে তৈরি টিকা মানুষের শরীরের মধ্যে ভাইরাসের প্রোটিনের গঠন তরান্বিত করবে, এমনটাই ধরে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এমন কোনো টিকার অনুমোদন দেয়া হয়নি।

এই সংকটের সময়ে অনেকেই দ্রুত টিকা আবিষ্কারের আশা করছেন। তবে সেটা সম্ভব হলেই যে মহামারি শেষ হবে, এমনটা মনে করার কারণ নেই। কারণ ভাইরাসের মিউটেশন বা রূপান্তর ঘটতে পারে, ভাইরাসের জেনেটিক গঠনও বদলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সফল পরীক্ষা সত্ত্বেও টিকা কোনো কাজে লাগবে না। ফ্লু ভাইরাসের জন্য প্রতি বছর নতুন টিকা তৈরি করতে হয়। পরিচিত করোনা ভাইরাসগুলিও নিজস্ব ডিএনএ বদলে ফেলার চেষ্টা করে।

কোভিড-১৯ প্যাথোজেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত মিউটেশন ঘটায়নি। তা সত্ত্বেও সময়ের সঙ্গে সংগ্রাম চলছে। টিকা যত তাড়াতাড়ি আসবে তত বেশি মানুষকে সুরক্ষা দেয়া যাবে, তাদের প্রাণ বাঁচানো যাবে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img

ডিআইজি রেজাউল করিম

যারা ফ্যাসিস্ট তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব Sep 16, 2025
img
আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় কর কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে বরখাস্ত Sep 16, 2025
img
পেলেকে ছাড়িয়ে রেকর্ড দামে বিক্রি হলো মেসির রুকি কার্ড Sep 16, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্প মালিক প্রতিনিধিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ Sep 16, 2025
img
মিয়ানমারে অবৈধভাবে পণ্য পাচারের সময় ১১ জনকে আটক করেছে নৌবাহিনী Sep 16, 2025
img
চবিতে ‘হোস্টেল সংসদ’ নির্বাচনের ঘোষণা Sep 16, 2025
img
সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করল বিএসএফ Sep 16, 2025
img
বিশ্ববাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম Sep 16, 2025
img
দুই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে শ্রীলঙ্কা, খালি হাতে বিদায় নিল হংকং Sep 16, 2025
img
ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি করল এনবিআর Sep 16, 2025
img
ইভ্যালি থেকে বেরিয়ে একই কৌশলে প্রতারণা, নারী গ্রেপ্তার Sep 16, 2025
img
এশিয়া কাপ জিতেনি বাংলাদেশ গুগোল করে নিশ্চিত হলেন ট্রট Sep 16, 2025
img
ড. ইউনূস ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনষ্ট হবে : রাশেদ খান Sep 16, 2025
img
ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য উমামার লিখিত আবেদন Sep 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন, তাহলে নির্বাচন বর্জনের দরকার হবে না Sep 16, 2025
img
আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Sep 16, 2025
img
আগস্টে ৪৯ মামলায় জড়িত ৩১১ দুর্নীতিবাজ Sep 15, 2025
img
১৫ কেজির কোরাল মাছ বিক্রি ১৮ হাজারে Sep 15, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সামনে হংকংয়ের ১৫০ রানের চ্যালেঞ্জ Sep 15, 2025
img
নিকুঞ্জে নাগরিক জাগরণ: হারানো শান্তি ফিরে পাওয়ার গল্প Sep 15, 2025