বিশ্বের ২৬ ধনীর সম্পদ দুনিয়ার অর্ধেক মানুষের সমান

বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক (৩.৮ বিলিয়ন) মানুষের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তার সমান সম্পদের মালিক বিশ্বের ২৬ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। আর ২০১৮ সালের বিশ্বে ধনীদের তালিকায় থাকাদের সম্পদ আরও বেড়েছে। তবে দরিদ্ররা হয়েছে আরও দরিদ্র। সম্পত্তির এই বিশাল ব্যবধানের কারণে দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদি শীর্ষ ধনীদের আয়ে ১ শতাংশ সম্পদ কর আরোপ করা হয়, তাহলে বছরে ৪১৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ আসবে। এই অর্থ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে না এমন শিশুদের শিক্ষা দেওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে ৩০ লাখ মৃত্যু এড়ানো যাবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফাম বিশ্বের সম্পত্তি কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন। সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে অক্সফাম জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মতে বিশ্বের ২২০০ বিলিয়নিয়ারের সম্পত্তির মূল্য ২০১৮ সালে বেড়েছে ৯০০ বিলিয়ন ডলার। যা প্রতিদিন বেড়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পত্তি বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ। বিপরীতে বিশ্বের দরিদ্র অর্ধেক মানুষের সম্পত্তি কমেছে ১১ শতাংশ। এর ফলে বিশ্বের অর্ধেক মানুষের সমান সম্পত্তি জমা হয়েছে বিলিয়নিয়ারদের হাতে।
প্রতিবেদনটিতে আরও উঠে এসেছে, আর্থিক মন্দার পর গত দশ বছরের বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রতি দুইদিন অন্তর নতুন একজন বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ধনীদের ১০ শতাংশের তুলনায় দরিদ্রতম ১০ শতাংশ মানুষ উচ্চহারে কর দিচ্ছেন।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জেফ বেজসের সম্পত্তি বেড়েছে ১১২ বিলিয়ন ডলারে। তার এই সম্পত্তির মাত্র ১ শতাংশ ১০৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ইথিওপিয়ার পুরো স্বাস্থ্য বাজেটের সমান।

অক্সফামের প্রচারণা ও নীতি বিষয়ক পরিচালক ম্যাথিউ স্পেনসার বলেন, চরম দারিদ্র্যে বাস করা মানুষের সংখ্যা কমে আসা গত শতকের শেষার্ধ্বের বড় অর্জন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অসমতা ভবিষ্যতে এই খাতের অগ্রগতিকে জটিল করে তুলছে। আমাদের অর্থনীতি যে পথে চলছে তাতে সম্পত্তি ক্রমবর্ধমানভাবে এবং অন্যায্যভাবে কয়েকজনের কাছে জমা হচ্ছে।

স্পেনসার আরও বলেন, এটা এমন হওয়া উচিত নয়। সবাইকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়ার পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে পৃথিবীতে। সরকারগুলোর উচিত সম্পদ ও ব্যবসায়ীদের কর বাড়ানো। যাতে করে তারা জনগণের জীবন পরিবর্তনের জন্য উন্নত মানের সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অনেক দেশ সরকারি সেবাখাতে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অসাম্যকে তীব্রতর করে তুলছে। স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২৬২ মিলিয়ন শিশু এখনও স্কুলে যেতে পারছে না, কারণ তাদের পিতা-মাতারা স্কুলের ফি, পোশাক ও বই কিনে দিতে পারছে না।

এদিকে বিশ্ব অসাম্য প্রতিবেদন ২০১৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি ডলারের মধ্যে মাত্র ১২ সেন্ট অর্জন করেছে পৃথিবীর অর্ধেক দরিদ্র মানুষ। বিপরীতে শীর্ষ ধনী ১ শতাংশ প্রতি ডলারের ২৭ সেন্ট পেয়েছে।

 

টাইমস/টিআর/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যবস্থা, গুজবে কান না দিতে নাগরিকদের অনুরোধ Nov 21, 2025
img
২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে ভারতের বিমান ঢোকা বন্ধ Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার গভীর শোক প্রকাশ Nov 21, 2025
img
বিএনপির হটকারিতার কারণে দেশ স্বৈরাচারী অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে: আকন্দ Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পের পর নারায়ণগঞ্জে তুলার গোডাউনে আগুন Nov 21, 2025
img
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে মুখ খুললেন মামদানি Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে ৩ জেলায় নিহত ৬ জন Nov 21, 2025
img
পাকিস্তানে কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ গেল ১৫ জনের Nov 21, 2025
img
বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া Nov 21, 2025
img
ইমরান কি তার স্কুলে আবার আগের মত করে ফিরতে পারবে? প্রশ্ন মাসুদ কামালের Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে ঢাবির একাধিক হলের ভবনে ফাটল Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে নরসিংদীতে আহত অর্ধশতাধিক Nov 21, 2025
img
সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা রোববার Nov 21, 2025
img
নৈতিকতার জায়গায় আমরা নিশ্চয়ই ভালো না : নিলোফার মনি Nov 21, 2025
img
শেষ দিন হতে পারত, ভূমিকম্পের পর বললেন ফারুকী Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্পে ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১৮ জন ঢাকা মেডিকেলে Nov 21, 2025
img
টপ থার্টিতেই থেমে গেল বাংলাদেশের মিথিলার যাত্রা Nov 21, 2025
img
সবাই কেন সমানভাবে ভূমিকম্প টের পায় না? Nov 21, 2025
img
ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে : প্রধান উপদেষ্টা Nov 21, 2025
img
এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য সতর্কবার্তা : উপদেষ্টা রিজওয়ানা Nov 21, 2025