ভিটামিন ‘এ’-র অভাবজনিত সমস্যা ও ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন

ভিটামিন ‘এ’-র অভাবজনিত সমস্যা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান পুষ্টি সমস্যা। ভিটামিন‘এ’-সমৃদ্ধ খাবারের অভাবই এর প্রধান কারণ। ভিটামিন‘এ’র অভাবজনিত কারণে শিশু রাতকানা রোগে ভোগে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্করা যকৃতে জমে থাকা ভিটামিন‘এ’-র কারণে এ ধরণের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকেন। ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে রোগ-সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং বারবার শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে, রোগ সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। 

ভিটামিন ‘এ’-র অভাব কেন হয়

  • জন্মের পর শিশুকে শালদুধ না খাওয়ালে।
  • শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ না খাওয়ালে।
  • বুকের দুধের পরিপূরক হিসেবে দেওয়া খাবারে ভিটামিন ‘এ’ কম থাকলে।
  • গর্ভবতী ও প্রসূতি মা ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে ভুগলে এবং তার বুকের দুধ শিশুকে খাওয়ালে।
  • ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুর পরিপূরক খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ‘এ’সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়ালে।
  • দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া, হাম ও মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগলে।
  • শিশু কৃমি আক্রান্ত হলে।

ভিটামিন ‘এ’-র উৎস

গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি এবং হলুদ ও কমলা রঙের সবজি ভিটামিনের প্রাথমিক উৎস। এ ছাড়া কলিজা, ডিম, মাংস, মাছ বিশেষত মলা ও ঢেলা মাছ এবং মাছের তেলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।

অনেক পরিবার শিশুদের নিয়মিত মাছ,মাংস, ডিম, কলিজা খাওয়াতে পারে না। এ কারণে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’-র অভাব দেখা যায়। এই অভাব দূর করার জন্য সরকার শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ায়।

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন

১৯৭৩ সাল থেকে দেশব্যাপী ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল বিতরণ করা হচ্ছে। ১৯৯৪ সাল থেকে ভিটামিন ‘এ’ সপ্তাহ পালন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে নিয়মিতভাবে জাতীয় টিকা দিবস (National Immunization Day-NID) পালন শুরু হলে কখনো কখনো এনআইডির সঙ্গে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। পোলিও টিকার সঙ্গে ছয় মাস পরপর ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হতো।

ভিটামিন ‘এ’-র সঙ্গে শিশুকে কৃমিনাশক খাওয়ানো শুরু হলে কর্মসূচির নাম হয়ে যায় ‘ন্যাশনাল ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী যেসব দেশে কৃমি সংক্রমণের হার শতকরা ৫০-এর বেশি, সেসব দেশে নিয়মিত ছয় মাস অন্তর কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। বাংলাদেশের শিশুদের কৃমিতে (রাউন্ড ওয়ার্ম, হুক ওয়ার্ম ও পিন ওয়ার্ম) আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই বেশি। কৃমি শিশুর শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। এর ফলে শিশু ভিটামিন‘এ’-র অভাবে ভোগে এবং শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তাই শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হয়। 

এই কর্মসূচিতে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১ থেকে ৫ বছর বয়সী সকল শিশুকে কৃমিনাশক এলবেনডাজল ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর বার্তাও প্রচার করা হয়। সারা দেশব্যাপী সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবার স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ (যেমন- বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট, ফেরিঘাট, বিমানবন্দর) কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ান।

ভিটামিন ‘এ’ খ্যাপসুল খাওয়ানোর সময় ও পরিমাণ

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট কোনো ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। এ ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি, কোর কমিটি এবং বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়। সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। 

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on: