করোনা না বন্যা

বাংলাদেশ একটি ছোট জনবহুল মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। বিবিএস এর মতে দেশের অর্থনীতিতে এখন সেবা খাতের অবদান ৫০%, শিল্প খাতের অবদান ৩৫% এবং কৃষির ১৪%। বর্তমান বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের জিডিপিও কমে গেছে এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিজিএমইএর মতে, করোনায় গার্মেন্টস শিল্পে ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয় আদেশ বাতিল হয়েছে। সেই সাথে সেবা ও শিল্প খাতে উন্নয়ন কমে গেছে। কৃষিখাত সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এই খাত প্রথম থেকেই ক্ষতির মুখে আছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর মতে, সাউথ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিটেন্স ২২ শতাংশ কমে যেতে পারে। বাংলাদেশের শর্টরানে (স্বল্প সময়) রেমিটেন্স না কমলেও লং রানে (দীর্ঘ সময়) কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিভিন্নভাবে কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং অবৈধভাবে কাজ থেকে অপসারণ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তবুও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করছে এবং তাদের নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না বা কমিয়ে দিচ্ছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৬০% বেতন ও ঈদের বোনাস কমিয়ে দিচ্ছে, যদিও তারা বিজিএমইএ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন।

অনেক মানুষ চাকরীচ্যুত হয়েছে এবং ভীষণভাবে আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে। সেই সাথে  নিম্ন আয়ের মানুষেরা বর্তমানের আগাম বন্যার কারণে তাদের স্থায়ী বাসস্থান হারাচ্ছেন। আর যাদের স্থায়ী কোন বাসস্থান নেই তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

বিবিসি’র তথ্যানুযায়ী, এই বন্যায় দেশের অর্ধকোটি  মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সেই সাথে ভারত প্রতিবছর বিশেষত বন্যার সময়  তিস্তা ব্যারেজ, ফারাক্কা বাঁধ  খুলে  দেয়। যদিও নদী আইনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা আছে উজানের দেশ বাঁধের মাধ্যমে ভাটির দেশের ক্ষতি করতে পারবেনা। দেখা যায় গ্রীষ্মে ভারতের পানি না দেয়াতে রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট এসব এলাকায় পানির অভাবে খরা দেখা দেয়। বাংলাদেশ এই কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এটা প্রায় প্রতি বছরের চিত্র।

অপরদিকে এবারের করোনার সাথে বন্যায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। সরকার থেকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা ঘোষণা সত্ত্বেও সুষম বণ্টনের অভাবে দেখা যায় এই নিম্ন আয়ের মানুষদের পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয় না বা বিশেষ কোনো সুবিধা পায় না। আর যদিওবা পায় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ প্রতিবছর বন্যায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহায় ও প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

এবার করোনা আর বন্যা পরিস্থিতি একই সাথে শুরু হওয়ায় স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কোনটার মোকাবেলা করবো, একে তো ছিল করোনা তার উপরে এসেছে আগাম বন্যা। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ যেকোনো পরিস্থিতি যৌথভাবে মোকাবেলা করার প্রত্যয় রাখে, যেমনটা আমরা ’৭১-এ দেখেছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Share this news on: