নিখোঁজের দেড় মাস পর গ্রেপ্তার স্বামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে হোসনা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূর লাশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর আকন্দপাড়া থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার হোসনা বেগমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হাসমত আলীর মেয়ে হোসনা বেগম।
আর অভিযুক্ত স্বামী মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়ামাসিমপুর গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আনারুল হক (৩০)
পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হাসমত আলীর মেয়ে হোসনা বেগম। প্রায় দেড় বছর আগে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আনারুলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই হোসনার ওপর নেমে আসে নানা অত্যাচার। কথায় কথায় মারধর করতো আনারুল। গত ছয় মাস আগে হোসনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে কিলঘুষিতে হোসনার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। নানা সময় যৌতুকের চাপ দিয়ে হোসনাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আবার অত্যাচার সইতে না পেরে কখনো কখনো হোসনা নিজেও বাবার বাড়ি চলে আসতেন।
গত ২৮ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে হোসনা স্বামীর বাড়িতে যান। এর পর থেকে হোসনার সঙ্গে বাবার বাড়ির লোকজন যোগাযোগ করতে পারছিল না। গত ২৬ আগস্ট বদরগঞ্জ থেকে মেয়ের খোঁজে জামাইয়ের বাড়িতে যান হোসনার বাবা হাসমত আলী। বাড়িতে গিয়ে দেখেন গোটা বাড়িতে তালা মারা। কোথাও বাড়ির লোকজন নেই। জামাই আনারুলের মোবাইল ফোনও ছিল বন্ধ।
পরে গত ২৮ আগস্ট মিঠাপুকুর থানায় হোসনার স্বামী আনারুল হক ও তার মা আনোয়ারা বেগমের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হোসনার বাবা হাসমত আলী। পরে মঙ্গলবার রাতে স্বামী আনারুলকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে লাশের অবস্থান জানায়।
হাসমত আলী বলেন, মেয়ের সুখের জন্য বিয়েতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দিই। এরপরও মেয়েটাকে তাড়ানোর জন্য আনারুল অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। এখন মেয়ের মাটিচাপা লাশ পেলাম। আমি ঘাতক জামাই ও তার মায়ের ফাঁসি চাই।
মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ হোসনা বেগমের স্বামী আনারুলকে মিঠাপুকুরে তার বাড়ির পাশের একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির পাশের একটি জমিতে পুঁতে রাখা হোসনার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, গুমের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। আনারুলের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অপর আসামি হোসনার পলাতক শাশুড়ি আইরিন বেগমকে এখন গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
টাইমস/এইচইউ