যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০ জনের ১ জন ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মধ্যে ৯০-৯৫% টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশ-ভারতের মতো জনবহুল দেশগুলোতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
আমাদের দেহে যখন ইনসুলিন প্রতিরোধ তৈরি হওয়ার মধ্যদিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ফলে আমাদের দেহ শর্করা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়।
বয়স, বংশগত ইতিহাস এবং জাতিগত কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, শরীরচর্চা না করা প্রভৃতি কারণেও রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ কিংবা ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রোগটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ও হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় দিগুণ বেড়ে যায়।
আমাদের হৃদপিণ্ড যখন প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহে ব্যর্থ হয়, তখন সে অবস্থাকে হার্ট ফেইলুর বা হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা বলা হয়। এর ফলে ফুসফুসে ও পায়ে পানি জমতে পারে। অনেক সময় এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, এর একটি হলো হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদযন্ত্রের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়া। যার ফলে এটি পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না।
হার্ট ফেইলুরের ঝুঁকি হ্রাস করতে অন্যতম একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো ওজন কমানো। অর্থাৎ যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা ওজন হ্রাসের মধ্য দিয়ে এ ঝুঁকি কমাতে পারেন। অন্য কথায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত যে সব ব্যক্তির পরিমিত ওজন রয়েছে, তাদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদের হার্ট ফেইলুর ঘটার ঝুঁকিও অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষকগণ সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ‘সার্কুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এই গবেষণায় ৫ হাজার ১০৩ জন ডায়াবেটিস টাইপ-২ আক্রান্ত রোগীর ওপর সমীক্ষা চালানো হয়, গবেষণা শুরুর আগে যাদের কেউই হার্ট ফেইলুরের সম্মুখীন হননি। প্রায় একযুগ সময়কাল ধরে তাদের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। এ সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের ২৫৭ জন হার্ট ফেইলুরের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব প্রাপ্ত বয়স্ক অংশগ্রহণকারী তাদের দেহের অতিরিক্ত চর্বি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন তাদের হার্ট ফেইলুরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে গিয়েছিল। এর থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, অতিরিক্ত ওজন কমানোর মধ্যদিয়ে কার্যকর ভাবে হার্ট ফেইলুরের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/এসএন