পরিবর্তন একটি চিন্তা মাত্র। কিন্তু বারবার যে কাজ করে আসছেন তা সত্যিকার অর্থে বদলানো আসলে কঠিন। এর কারণ আপনি সব সময় এটি করে অভ্যস্ত। নিয়মিত কোনও কাজ করলে তা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। যত বেশি নিয়মিত কোনও কাজ করবেন, তার থেকে বেড়িয়ে আসাও ততবেশি কঠিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে একগ্লাস পানি খাওয়া, রাতে হাঁটতে যাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রভৃতি অভ্যাসগুলি ভাল অভ্যাস। আমরা সাধারণত ভাল অভ্যাস বদলাতে চাই না।
কিন্তু ভাল অভ্যাসের পাশাপাশি আমাদের এমন কিছু অভ্যাস আছে যা আমাদের দৈনন্দিন কর্মজীবন এবং স্বাস্থ্যকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে। আমরা আমাদের এইসব নেতিবাচক অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে চাই। তবে সব সময় সফলতা পাওয়া যায় না।
চার্লস ডুহিগ তার “দ্যা পাওয়ার অব হ্যাবিট: হোয়াই উই ডু হোয়াট উই ডু ইন লাইফ এন্ড বিজনেস” বইতে অভ্যাসকে বুঝতে চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটি আমাদেরকে বদভ্যাস ত্যাগেও সহায়তা করবে।
ডুহিগের মতে, অভ্যাস চক্রের ৩টি ধাপ রয়েছে যা আমাদেরকে এর মধ্যে আবদ্ধ রাখে।
রিমাইন্ডার (যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়)
আমাদের চারপাশে এমন অনেক জিনিস আছে যা আমাদেরকে কোনও কিছু করতে মনে করিয়ে দেয়। এসব রিমাইন্ডারের মধ্যে রয়েছে স্থান, ব্যক্তি, সময়, বর্তমান মানসিক অবস্থা প্রভৃতি।
ধরুন আপনি কফি সপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কফির গন্ধ আপনার কফি খাওয়ার অভ্যাসটিকে ট্রিগার করবে।
রুটিন
রুটিনের কারণেও মানুষ কিছু কাজ বারবার করতে থাকে, যা অভ্যাস বা বদ অভ্যাস হিসেবে পরিচিত। যেমন দুশ্চিন্তায় অনেকে কলম কামড়ান বা দাঁত দিয়ে নখ খুটেন। অনেকটা নিজের অজানেই মানুষ এটি করে থাকে।
পুরস্কার
যেকোনও অভ্যাস বা বদভ্যাসের সাথে রিওয়ার্ড বা পুরস্কার বিষয়টি জড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন কাজ করার ফলে আমরা এর থেকে এমন কিছু লাভ করি যা আমাদেরকে এটি বারবার করতে উদ্বুদ্ধ করে। যা ধীরে ধীরে আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়।
যেমন খুব মন মরা অবস্থায় ইউটিউব ভিডিও দেখে আপনি যদি এক ধরণের প্রশান্তি লাভ করেন, তাহলে দেখা যাবে পরবর্তিকালে নিজের অজান্তেই এমন অবস্থায় ইউটিউব খুলে বসে আছেন।
তাহলে কিভাবে এই অভ্যাসের চক্র থেকে বের হয়ে আসবেন?
অভ্যাস চিহ্নিত করুন
প্রথমে আপনি যেই অভ্যাসটি বদলাতে চাচ্ছেন তা খুঁজে বের করুন। ধরুন আপনি অনেক রাত পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিও দেখেন, যা আপনাকে এক ধরণের প্রশান্তি দেয়। কিন্তু এর ফলে আপনার ঘুম ঠিকমত হয় না, সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করেন।
অন্যভাবে নিজেকে পুরস্কৃত করুন
এবার এই অভ্যাসটিকে দূর করতে রাত জেগে ইউটিউব দেখার মধ্য দিয়ে আপনি যে পুরস্কার পেতেন তার বদলে অন্য ভাবে পুরস্কৃত করতে হবে। জলদি ঘুমালে আপনি পরদিন প্রাণবন্ত অনুভব করবেন।
রাত জেগে ভিডিও দেখার বদলে জলদি ঘুমিয়ে আপনি পরদিন যে পুরস্কার লাভ করছেন তা অনুভব করতে হবে এবং সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। পরের বার রাত জেগে ভিডিও দেখার আগে জলদি ঘুমালে যে এনার্জি আপনি অনুভব করেছেন তা স্মরণ করুন। রাত জাগার ফলে যে ক্লান্তি আসে তা মনে করিয়ে দিন নিজেকে।
সতর্ক ভাবে লক্ষ্য করুন
যে সব রিমাইন্ডার আপনাকে ওই কাজটি বারবার করতে প্রলুব্ধ করতে তা নোট করে রাখুন। সচেতন ভাবে কয়েকদিন এই রিমাইন্ডারগুলি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। এই সব রিমাইন্ডার থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করুন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
টাইমস/এনজে/এসএন