দেশের সবচেয়ে বড় দীঘি রামসাগর

রামসাগর নামটি শুনলে মনে হতে পারে বিশাল কোনো সাগর কিংবা মহাসাগর হয়তো। কিন্তু না, রামসাগর কোনো সাগর বা মহাসাগর নয়। এটি দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় দীঘি।

দীঘিটি জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণে তাজপুর গ্রামে অবস্থিত। বিশাল এই দীঘির আয়তন চার লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গমিটার। এর প্রতিটি পাড়ের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ১৩ মিটার। এছাড়া এটি দৈর্ঘে এক হাজার ৩১ মিটার ও প্রস্থে ৩৬৪ মিটার। দীঘিটির গভীরতা নয় মিটারের মতো।

দিনাজপুরের তৎকালীন রাজা রামনাথ ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সালের মধ্যে দীঘিটি খনন করেন। তার নামানুসারেই দীঘির নাম রামসাগর।

প্রচলিত আছে, প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক মাত্র ১৫ দিনে এই বিশাল দীঘিটি খনন করেছিল। সে সময়ে দীঘিটি খনন করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা।

দীঘিটি নিয়ে বেশ কয়েকটি লোককথা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মত হলো, ১৯৫০ সালের খরায় এই অঞ্চলে পানিসহ ব্যাপক খাদ্যাভাব দেখা দেয়। সে সময় রাজা রামনাথ স্বপ্নে আদেশ পেয়ে মাত্র ১৫ দিনে একটি দীঘি খনন করেন। কিন্তু দীঘি খনন হলেও সেটাতে পানি উঠছিল না। আবার একদিন রাজা স্বপ্নে আদেশ পান যে, তার একমাত্র সন্তানকে এই দীঘিতে বলি দিলে তবেই পানি উঠবে। সেই আদেশ মতো রাজা তার একমাত্র ছেলেকে পুকুরে ছেড়ে দেন। রাজপুত্র দীঘিতে নামতেই দীঘিটি পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল। আর রাজপুত্র পানিতেই বিলীন হলে গেলেন!

১৯৬০ সালে দীঘিটির দায়িত্ব পায় বনবিভাগ। ১৯৯৫ সালে এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ২০০১ সালে দীঘিটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে সরকার।

দীঘিটির চারপাশে রয়েছে বৃক্ষরাজি। প্রত্যেক পাড়ে রয়েছে দর্শনার্থীদের বসার সুব্যবস্থা। এখানে রয়েছে ছোট একটি চিড়িয়াখানা। রয়েছে একটি শিশুপার্কও। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি পাঠাগার। তাছাড়া পিকনিক করার জন্য রয়েছে সাতটি আলাদা স্থান।

প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এখানে। এখানকার প্রাকৃতিক ও মনোরম দৃশ্য মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে যেতে হবে দিনাজপুর। এজন্য নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহনসহ বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রেণিভেদে ভাড়া লাগবে পাঁচশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। এরপর অটোরিকশায় সহজেই যাওয়া যাবে রামসাগর।

এছাড়া ট্রেনেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস নামে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে।

থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য দিনাজপুরে রয়েছে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে পর্যটন মোটেল, হোটেল ডায়মন্ড, হোটেল নবীন, হোটেল আল রশিদ প্রভৃতি। ভাড়া পড়বে শ্রেণিভেদে পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা।

খাবার ব্যবস্থা: খাবারের জন্যও রয়েছে ভালোমানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ফ্রান্স Jul 01, 2025
img
সব আওয়ামী লীগারেরাই মেন্টালি সিক, তাদের থেরাপি ও রিহ্যাবে পাঠানোর পরামর্শ পিনাকির Jul 01, 2025
img
সবচেয়ে বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হজ আয়োজন ২০২৫ সালে Jul 01, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৯ দিনেই এসেছে ২৭০ কোটি ডলার Jul 01, 2025
img
'সৌদি আরবই এখন আমার ঠিকানা' Jul 01, 2025
img
শাকিব খানের ‘মেগাস্টার’ ট্যাগ নিয়ে তোপের মুখে জাহিদ হাসান Jul 01, 2025
img
পুরো অর্থনীতিই এখন মব এবং মামলার বাণিজ্যের মধ্যে ঢুকে গেছে : গোলাম মাওলা রনি Jul 01, 2025
img
১টি ত্রিপল, ৩টি সেঞ্চুরি - এক ইনিংসে ৮২০ রানের কীর্তি Jul 01, 2025
img
‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ অভিনয় করে কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সেই মুন্নি! Jul 01, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ Jul 01, 2025
img
'ফুটবলের প্রতি যে ভালোবাসা এখনও আমার ভিতরে আছে তা আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে' Jul 01, 2025
img
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’- প্রেস সচিব শেয়ার করলেন কবিতা Jul 01, 2025
img
এবার ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটিও নিজের করে নিতে চান ধোনি Jul 01, 2025
img
জুলাই কেবল আবেগ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক: প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি আগামী সোমবার Jul 01, 2025
img
পাকিস্তানে ২ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম Jul 01, 2025
img
আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
আরেক মেয়াদে টিটুর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করল বাফুফে Jul 01, 2025
img
জাতীয় দলের নতুন নির্বাচক হিসেবে শিপনকে চায় বিসিবি Jul 01, 2025
ফেসবুক পোস্টে এই দিনটি স্মরণ করলেন উমামা ফাতেমা Jul 01, 2025