মিষ্টি, ছোট বড় সবার প্রিয় খাবারের একটি। সুস্বাদু আর মুখরোচক মিষ্টি মানেই জিবে জল এসে যাওয়া। তার উপর মিষ্টি যদি হয় দেশসেরা-তাহলে তো কথাই নেই।
মূল সড়ক থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে শহরের মনোহরপুরে মাতৃভান্ডারের অবস্থান। টিনশেডের খুপড়ি ঘর। পাশে প্রায় একইরকমের আরো দুটি মিষ্টির দোকান। তবে মাতৃভান্ডার ব্যাতিক্রম। গ্রাহক দেখলেই সেটি পরিস্কার। অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। পাশের দোকান ক্রেতাশুন্য, অথচ মাতৃভান্ডারে ক্রেতা সামাল দেয়া কঠিন, যেখানে পা ফেলাও কষ্টকর।
শত বছরের ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানটি মান আর গুনে একটুও ছাড় দেয়নি। যার ফলে সময় বদলালে গ্রাহকের চাহিদা বদলায়নি। বরং আগের চেয়ে গ্রাহকদের ভীড় বেশি। তাই আক্ষেপও রয়েছে।
কারিগরদের এমন ব্যাস্ততা দিনরাত চব্বিশ ঘন্টাই থাকে। কেউ একটু কথা বলারও সময় পাননা। সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। পাশেই উত্তপ্ত গরমে দুধ জ্বাল চলছে। দক্ষ কারিগর ছাড়াও প্রায় পনের থেকে বিশ জন রয়েছেন, যারা শিফট অনুযায়ি কাজ করেন। দিনের মিষ্টি দিনে বিক্রি করায় মাতৃভান্ডারের সুনামও আলাদা। বাশি এবং দুগর্ন্ধযুক্ত মিষ্টি বলতে কোনো কথা নেই মাতৃভান্ডারে।
প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুইশ কেজি দুধে যতটুকু মিষ্টি তৈরী করা যায়, তার পুরোটাই বিক্রি হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। এর মধ্যে রসমালাই সেরার সেরা, এরপরেই রয়েছে, স্পন্জ, রসগোল্লাসহ অন্যান্য মিষ্টি। মাতৃভান্ডারের মিষ্টি কিনতে দেশের আনাচে কানাচ থেকে ছুটে আসেন ক্রেতারা।
কিন্তু কুমিল্লা মাতৃভান্ডারের নামে গড়ে উঠা শত শত মিষ্টির দোকান প্রতারণার হাট খুলে বসেছেন। আসল মাতৃভান্ডারের মান, গুন এবং সুনামকে কাজে লাগাচ্ছে একটি চক্র। যারা ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ক্যান্টমেন্টের আশপাশে একইনামে একাধিক মাতৃ ভান্ডার গড়ে তুলেছে।
জানা গেছে, অন্তত একশ মাতৃভান্ডার গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। যারা প্রকৃত মাতৃভান্ডারের সুনামকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার দোকান খুলে বসেছেন।
রাস্তার পাশে টিনশেডের টং ঘর থেকে শুরু করে পাইকারি দোকানেও মাতৃভান্ডারের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। যদিও আইনী ঝামেলা এড়াতে কৌশলে নামের আগে নিউ মাতৃভান্ডার, আদি মাতৃভান্ডার, কুমিল্লার মাতৃভান্ডারসহ নানা উপ নাম সংযুক্ত করে দিয়েছে।
রাস্তার পাশে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মাতৃভান্ডার নামে ব্যবসা খোলা হয়েছে। অথচ নিজেদের নেই কোনো কারিগড়, নেই কারখানা এমনকি মান, গুন নিয়ে গ্যারান্টিও।
দিনে দুপুরে এমন প্রতারণার খপ্পড়ে পড়ছেন অসংখ্য ক্রেতা। বিশেষ করে এই পথে চলাচলকারি সাধারন মানুষ। যারা মাতৃভান্ডারের প্রকৃত মিষ্টি খেতে চান, তারা হয়তো জানেনও না যে মুল মাতৃভান্ডারের আলাদা কোনো শাখা নেই। অথচ মাতৃভান্ডারের নামে পকেট কাটা চলছে।
মাতৃভান্ডার নিয়ে দিনে দুপুরে এমন প্রতারণা দীর্ঘদিনের। তবে তারপরও থামানো যায়নি। মিষ্টি নিয়ে প্রকাশ্য এমন প্রতারণা, পৃথিবীর কোথাও আছে বলেও জানা নেই।
সেই আদিকাল থেকে ছোট বড় সবার কাছে মিষ্টি সবার প্রিয় জিনিস। মুখরোচক এবং সুস্বাদু মিষ্টি নিয়ে এমন প্রতারণা সত্যি অবাক করার মত।