গাজীপুর সিটি নির্বাচন: প্রচার শেষ, অপেক্ষা ভোটের

মধ্যরাতে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ভোট গ্রহণ হবে আয়তনে দেশের বৃহত্তম রাজধানী লাগোয়া এই সিটিতে। প্রায় দুই সপ্তাহের বিরামহীন প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবারেও নানা প্রতিশ্রুতি আর ভোটের আবেদন নিয়ে নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন প্রার্থীরা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মোট ৩৩৪ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৪৬জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৭৯জন প্রার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ২৫মে নির্বাচনে লড়বেন ৩৩৩জন প্রার্থী। ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২হাজার ৭৪৭জন, মহিলা ভোটার ৫লাখ ৮৬হাজার ৬৯৮জন ও হিজড়া ভোটার আছে ১৮জন। ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যেই ১০৯৭১ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো শুরু হবে।

নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র ও আশপাশে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায়ের স্বার্থে র‌্যাব পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি। এছাড়াও ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ৩৫১টি কেন্দ্রকে চিহিৃত করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে একজন অস্ত্রসহ এসআই/এএসআই ০১জন, ৩ জন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ ১জন আনসার (পিসি), অস্ত্রসহ ১জন (এপিসি), ১০ জন আনসার সদস্য সহ মোট ১৬জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোক নিয়োগ থাকবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ান আনসার এর সমন্বয়ে প্রতি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে মোবাইল ফোর্স, ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। প্রতি ২ ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের টিম ও ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১প্লাটুন করে বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও কেন্দ্র অনুযায়ী থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াইয়ের আভাস মিলছে। প্রথমে নির্বাচন সহজ মনে হলেও শেষ সময়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারেন। দলীয় কোন্দল ও বিবাদে অনেকটা আওয়ামী লীগে ঘরের শত্রু বিভীষণ পরিস্থিতি নগরজুড়ে। ভোটের নানা পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। তবে ইসলামী আন্দোলনও উল্লেখযোগ্য একটি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসতে পারেন।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর টঙ্গী এলাকার নিজ বাসায় নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান। প্রচারণার শেষ দিনে তিনি কোথাও গণসংযোগে বের হননি। আগামী ২৫ মে নৌকার পক্ষে রায় দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান তিনি। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুরে ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও নৌকার জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশা প্রকাশ করে আজমত উল্লা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ হচ্ছে না, হবেও না।

যতই বাধা আসুক, যতই হুমকি আসুক, ভোটের দিন সকাল সকাল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়েছেন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। প্রচারণার শেষ দিন বিকাল ৪টায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রচারণায় বের হন। পরে তিনি নগরের ছয়দানা, মালেকের বাড়ী, সালনা, চান্দনাসহ গাজীপুর শহরে গণসংযোগ করেন।

তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোটের দিন ভোটারদের হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। তাই ভোটারদের সকল ধরনের অন্যায়ের জবাব ভোটের মাধ্যমে দেয়ার আহবান জানান তিনি। এছাড়াও ভোট যাতে কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে সেজন্য কেন্দ্র পাহাড়া দেয়ারও আহবান জানান জায়েদা খাতুন।

বিএনপি ঘরনার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহ নুর ইসলাম রনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। প্রথম থেকেই তার নজর বিএনপির ভোটের দিকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি নির্বাচন না করায় ও প্রতি ওয়ার্ডে তাদের কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলে কর্মী সমর্থকরা ভোটে অংশ নেবেন কিনা তা নিশ্চিত না হওয়ায় তার কপালে এখন চিন্তার ভাজ। দলের ভোট না পেলে তাকে হতাশ হয়েই ভোটের মাঠ থেকে ফিরতে হবে। প্রচারণার শেষ দিন তিনি টঙ্গী এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটান।

তিনি বলেন, বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেয়ায় দলটির অগনিত কর্মী সমর্থক তাকে বেছে নেবে। এছাড়াও সরকারবিরোধী ভোটও তিনি পাবেন। আধুনিক নগর গড়তে তাকে বেছে নেয়ার জন্য নগরবাসীর কাছে তার হাতি প্রতিকে ভোট চান তিনি।

Share this news on: