শিশু আয়েশা হত্যা: মেয়ের শোকে এখনো নির্ঘুম রাত কাটে ইদ্রিস-রাজিয়ার

রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় দুই বছরের শিশু আয়েশা মনিকে ধর্ষণের পর হত্যার আড়াই মাস পার হয়েছে। মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ইদ্রিস আলী ও রাজিয়া সুলতানা দম্পতি। কোনোভাবেই মেয়ে হত্যার শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। রাতে ঘুমাতে গেলেই ছোট্ট আয়েশার মুখ ভেসে উঠে। আর মেয়ের কথা মনে হলেই তারা আর ঘুমাতে পারেন না।

শুক্রবার গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৮২/সি/১ নম্বর বাসার গিয়ে দেখা যায়, টিনসেড কলোনির একটি রুমে ভাড়া থাকেন ইদ্রিস ও তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। অভাবের সংসারে তাদের তিন মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে ইরা মনি স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এছাড়া তানজিমা ও ফারিহা নামে যমজ মেয়ে রয়েছে তাদের।

এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে এ প্রতিবেদককে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত আয়েশা মনির বাবা-মা। সন্তানের শোকে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ভুলে গেছেন রাজিয়া সুলতানাকে দেখেই বোঝা গেল। নির্ঘুম রাত কাটানোর ছাপ তার চোখে-মুখে।

স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন ইদ্রিস আলী; মেয়েকে হারিয়ে তিনিও যে শোকে পাথর।

সেই দিনের মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাজিয়া সুলতানা জানান, বাসায় গ্যাস না থাকায় গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে পাশের নান্নু মিয়ার বাসায় রান্না করতে যান তিনি। এসময় আয়েশা মনিকে তিনি বাসায় রেখে যান। কিন্তু রান্না শেষ করে রুমে ফিরে দেখেন আয়েশা নেই। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে একই রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর বাসা থেকে একটি শিশুকে ফেলে দেয়া হয়েছে এমন তথ্য পেয়ে দ্রুত সেখানে যান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে বাসায় খেলাধুলা করছিল। এ সময় নাহিদ হোসেন (৪০) নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা তার নিজ বাসার (বাসা নম্বার ৫৩/১/ছ) তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। পরে বাসার নিচে ফেলে দেয়।

তিনি আরও জানান, মর্মান্তিক এ ঘটনার পর সেই দিন প্রথমে কেউ তাদের পাশে আসেনি। এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে তিন মেয়েকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করেন তিনি। মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে একাই মানববন্ধন করেন।

চোখের পানি মুছতে মুছতে রাজিয়া বলেন, আমার স্বামী একজন ওয়ার্কশপ শ্রমিক। দিনের বেলা তিনি কামে চলে যান। আমিও বাসায় কাম করি। দিনে ব্যস্ত সময় পার করলেও রাতের বেলা আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে যায়। রাতে ঘুম আসে না। অনেক সময় বিছানায় বসে কান্না করি।

তবে শোকে বিহ্বল ইদ্রিস আলী ও রাজিয়া সুলতানা দম্পতির একটাই চাওয়া-মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার।

প্রসঙ্গত, শিশু আয়েশা মনি হত্যার ঘটনায় ৭ জানুয়ারি বাবা মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে গেণ্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় গেণ্ডারিয়া দিননাথ সেন রোডের ৫৩/১-ছ এর বাসিন্দা মৃত ডাক্তার ওয়াইজ উদ্দিনের ছেলে মো. নাহিদ হোসেনকে (৪০) আসামি করা হয়। পরে নাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় এখনো কারাগারে রয়েছেন নাহিদ।

শুরুতে গেণ্ডারিয়া থানার এসআই হারুন অর রশিদকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাস অতিবাহিত হলেও মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেননি তিনি। পরে মামলাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

টাইমস/কেআরএস/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল-এর প্রশিক্ষণ উন্নয়নে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা May 07, 2024
img
ভোট কেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি সিইসির কঠোর হুঁশিয়ারি May 07, 2024
img
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে কোক স্টুডিও বাংলা, ফের সমালোচনা May 07, 2024
img
দেশে যানবাহনের নতুন স্পিড লিমিট, মোটরসাইকেলের গতি নামানো হলো ৬০-এ May 07, 2024
img
সূর্যকুমারের সেঞ্চুরিতে জয়ে ফিরল মুম্বাই May 07, 2024
img
রাফায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত ১২, যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত May 07, 2024
img
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ৩য় দফার ভোটগ্রহণ শুরু May 07, 2024
img
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন May 07, 2024
img
নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত May 07, 2024
img
দুপুরের মধ্যে ১৫ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস May 07, 2024